অর্ণব দাস, বারাসত: অশোকনগরের কিডনি পাচারের তদন্তে আইনজীবীর পর গ্রেপ্তার আরও তিন স্থানীয়। ধৃতদের মধ্যে একজন আবার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী। সূত্র বলছে, একদিকে স্বাস্থ্যকর্মী, অন্যদিকে শাসক দলের সঙ্গে যোগ, জোড়া এই ক্ষমতাকে কিডনি পাচারে কাজে লাগাত। যদিও ধৃতকে দলীয় কর্মী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেছে শাসক দল।
ধৃতদের নাম শিশির কর্মকার, সুরজিৎ ঘোষ, কালাচাঁদ দাস। শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে শিশির অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভা পরিচালিত হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী-সহ একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। গত নির্বাচনে পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্ট ছিল সে। কিডনি পাচারের ঘটনায় তৃণমূল কর্মীর নাম জড়ানোয় সরব হয়েছে বিরোধীরা। যদিও অশোকনগর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকারের দাবি, “ধৃত শিশির আমাদের দলের কেউই নয়। অযথা দলের নামে বদনাম করা হচ্ছে।”
সূত্র বলছে, একদিকে স্বাস্থ্যকর্মী অন্যদিকে শাসকদলের সঙ্গে যোগ, জোড়া এই ক্ষমতাকে কিডনি পাচারে কাজে লাগত সে। সহজেই দাতারা তাঁর কথায় ভরসা করে কিডনি দিতে রাজি হয়ে যেত। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে টাকা শোধ না করতে পারলে কিডনি দানে উৎসাহিত করত শিশির। সে বোঝাত, একটি কিডনি দিলে শরীরের কোনও ক্ষতি হবে না বরং ঋণের টাকার শোধ হয়ে যাবে, পাশাপাশি বাড়তি টাকাও আসবে। বাকি দুই ধৃত কালাচাঁদ ও সুরজিত সুদখোর শীতলের শাগরেদ হিসেবে কাজ করত। ঋণ গ্রহণকারীদের কাছে গিয়ে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করত। কেউ টাকা দিতে না পারলে চাপ দিয়ে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করত।
সূত্রের খবর, কিডনি পাচারের একটি অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে আরও একটি কিডনি বিক্রির অভিযোগ দায়ের হয়েছে অশোকনগর থানায়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে জেলা থেকে ছাড়পত্র না পেয়েও রাজ্য থেকে ছাড়পত্র মিলেছে কিডনিদাতার। তারপরেই তড়িঘড়ি সংশ্লিষ্ট নেফ্রোকেয়ারে গিয়ে অশোকনগর থানার পুলিশ তা রুখে দেয়। আর সেই ঘটনাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিশির, কালাচাঁদ ও সুরজিৎকে। প্রত্যেকেই সুদখোর শীতলের গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। এই প্রসঙ্গে বারাসত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া জানিয়েছেন, কিডনি পাচারের ঘটনায় পৃথক দুটি কেস হয়েছে। প্রথমটিতে শীতলদের গ্যাং গ্রেপ্তার হয়েছে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে কেবল দাতা আলাদা। বাকি গোটা গ্যাং একই।