সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গোৎসবের কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছিল। ফলে পুজো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সাধারণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পুলিশের তরফে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়। সেসবের জেরেই সমস্ত আশঙ্কা কাটিয়ে এবছর নির্বিঘ্নেই কাটল শারদোৎসব। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী – এই পাঁচদিন বাংলাদেশের কোথাও কোনও অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। যদিও উৎসবের মাঝেও মিশেছে রাজনীতি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে এবারের পুজোয় সেই রেশ ছিল।
অতীতে দেখা গিয়েছে, বরাবরই বাংলাদেশের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন আওয়ামি লিগ তথা শেখ হাসিনা সরকারের উপর আস্থা রেখেছিলেন। অন্ততঃ আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলেই ভরসা ছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে, শেখ হাসিনা জমানাতেও প্রায় দুর্গোৎসবের সময় কোথাও না কোথাও মণ্ডপ-মন্দির-বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট এমনকি অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। কোনও কোনও সময় প্রাণহানিও ঘটেছে। তৎকালীন সরকারের বয়ান ছিল, তাদের হেয় করতে কোনও গোষ্ঠী এসব করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল, সরকার কেন তা রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার? সরকারের কাজ তো দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা বিধান করা। অতীতে যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে আওয়ামি লিগ, এবছরের দুর্গোৎসবে তা অনুপস্থিত ছিল। যদিও খানিক ভয় কাজ করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। তবে সবকিছু নির্বিঘ্নে মিটে যাওয়ায় প্রশংসার দাবি রাখে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার।

অবশ্য শুধু অন্তর্বর্তী প্রশাসনই নয়, এর কৃতিত্ব বিএনপি, জামাত-ই-ইসলামি, ছাত্রদের জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্য রাজনৈতিক দলগুলিরও। আওয়ামি লিগ এই মুহূর্তে নিষিদ্ধ দল। নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে দেশে-বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন। তাঁদের অনুপস্থিতে বিএনপি, জামাত-ই-ইসলামি, এনসিপি নেতৃত্ব পুজোর শুরু থেকেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখেছেন, পাশে থাকার অভয় দিয়েছেন। তার উপর আনসার, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিয়মিত মন্দির ও মণ্ডপের চারপাশ দেখভাল করেছেন। ছিল বিস্তর নিরাপত্তাবেষ্টনীও। যে কারণে পুজোর পাঁচদিন কোনও অঘটন ঘটেনি বলে দাবি পুলিশের।
তবে এহেন শান্তিপূর্ণ শারদোৎসবের নেপথ্যে অন্য অঙ্ক দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই দুর্গাৎসব ঘিরে ভোটের রাজনীতিতে তৎপর ছিল বিভিন্ন দলগুলি। নানা ইস্যুতে আন্দোলন নিয়ে রাজপথে থাকলেও ভিতরে ভিতরে ভোট প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন নেতারা। তাই এবার দুর্গাপুজো রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জনে দলগুলোর নেতৃবৃন্দের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। মন্দির-মণ্ডপে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি আর্থিক অনুদান, মণ্ডপ পরিদর্শন, শুভেচ্ছা ও কুশলবিনিময়ের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জনে মরিয়া ছিলেন। লক্ষ্য, নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট টানা।