বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: শনিবার থেকেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আবহ রাজধানীতে। দিল্লিতে পা রাখছেন যুযুধান দু’পক্ষের একের পর এক সাংসদরা। অনেক নতুন সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে পুরনোদের ‘মক পোলে’র ব্যবস্থা করেছে দুই শিবিরই। শনিবার থেকেই শুরু হবে ‘মক পোল’। তিনদিনের শিবির শেষে এনডিএ এবং তাঁদের প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণানের সমর্থনকারী সাংসদদের সঙ্গে সোমবার নৈশভোজে মিলিত হবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোটের তরফে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে মিলিত হতে পারেন সাংসদরা। তবে এবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অঙ্ক বেশ কঠিন ও জটিল। কারণ সরকার ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে ব্যবধান আগেরবারের তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে ক্রস ভোটের সম্ভাবনাও প্রবল হচ্ছে।
২১ জুলাই রাতে আচমকাই শারীরিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। তারপর থেকেই পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহরা তাঁদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও সংঘ পরিবারের পছন্দের মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি পি রাধাকৃষ্ণানকে প্রার্থী করেন। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি সুদর্শনকে প্রার্থী করে চমক দেয় ইন্ডিয়া জোট। কেন দু’পক্ষই দক্ষিণ ভারতের অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করা দু’জনকে প্রার্থী করলেন? সূত্রের খবর, তৃতীয় মোদি সরকার গঠনের সময় লোকসভার অধ্যক্ষের পদ দাবি করেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু। কিন্তু অধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ শরিকদের হাতে ছাড়তে চাননি মোদি-শাহরা। তাতে মনঃক্ষুণ্ণ হন চন্দ্রবাবু। রাধাকৃষ্ণানকে প্রার্থী করে মোদি-শাহরা ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মেরেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে পালটা সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। কারণ জন্মসূত্রে তিনিও দক্ষিণ ভারতীয় এবং একসময় চন্দ্রবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই এবার এনডিএ প্রার্থীর জয় মসৃণ হবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক কারবারিরা।
এর পাশাপাশি রয়েছে অঙ্কের খেলা। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদের দুই কক্ষের সাংসদরা। জগদীপ ধনকড়ের সময় লোকসভায় বিজেপির একার ৩০২ সাংসদ ছিল। তারপর শরিকদের সমর্থন ছিল। রাজ্যসভাতেও অনেকটাই এগিয়ে ছিল এনডিএ। এবার বিজেপির ২৩৫ জন সাংসদ। ফলে নির্ভর করতে হচ্ছে নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নায়ডু, চিরাগ পাসোয়ানদের ওপর। এছাড়াও ছোট ছোট শরিকদের কাছে সমর্থনের জন্য হাত পাততে হচ্ছে। অন্যদিকে, এবার ইন্ডিয়া জোট অনেক বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। গতবার লোকসভায় কংগ্রেসের ছিল ৫৪টি আসন। এবার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ। আবার তৃণমূল বা ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টির শক্তিও দ্বিগুণ হয়েছে। এরপরেও রয়েছে নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি বা জগনমোহনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস। যদিও দু’দলই এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ভোট যেহেতু গোপন ব্যালটে হবে, তাই অনেক সাংসদই ‘ক্রশ ভোট’ করতে পারে বলে আশঙ্কা। তাই আগে থেকেই সতর্ক দু’পক্ষ।