উত্তরে অনাবৃষ্টি, সঙ্গী বেহিসাবি জল উত্তোলন,  শুকিয়ে মরছে হেক্টরের পর হেক্টর চা বাগান

উত্তরে অনাবৃষ্টি, সঙ্গী বেহিসাবি জল উত্তোলন, শুকিয়ে মরছে হেক্টরের পর হেক্টর চা বাগান

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চার দশকেও এমন দেখেননি চা বিশেষজ্ঞরা। একদিকে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদনের জেরে অনাবৃষ্টি। অন্যদিকে বেহিসাবি জল উত্তোলনের ধাক্কায় হুহু করে নামতে থাকা ভূগর্ভস্থ জলস্তর। দুই বিপর্যয়ের জেরে সেচের জল মিলছে না। শুকিয়ে মরছে উত্তরে হেক্টরের পর হেক্টর চা বাগান। তারই জেরে ফার্স্ট ফ্ল্যাশে মার খাওয়ার পর সেকেন্ড ফ্লাশেও গর্জেছে বিপদ। পাতার অভাবে বন্ধ হয়েছে অধিকাংশ বটলিফ কারখানা। মাথায় হাত পড়েছে চা চাষিদের।

ডুয়ার্সের চা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক তৃণা মন্ডল বলেন, “পরিসংখ্যান বলছে শেষ চল্লিশ বছরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। অনাবৃষ্টির জেরে জলস্তর এতটাই নেমেছে যে সেচের জল মিলছে না। ওই কারণে চা বাগানগুলোতে রোগপোকার আক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।” কেন এমন পরিবর্তন?
তৃণাদেবীর জানান, উড়ালপুল নির্মাণ, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ এবং নগরায়ণের ধাক্কায় নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন চলছে। ওই কারণে একদিকে যেমন বৃষ্টিপাত কমেছে। অন্যদিকে বহুতলের সংখ্যা বেড়ে চলায় বেহিসাবি জল উত্তোলন হচ্ছে। পরিণতিতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর উদ্বেগজনকভাবে নামছে। ওই কারণে চা বাগানের গভীর নলকূপে জল উঠছে না। তিনি বলেন,”প্রতিবছর শীতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়। সেটা উত্তরে ক্রমশ কমছে। এবার খুবই কমেছে। বাগডোগরা, শিলিগুড়ি, ডুয়ার্সের কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সামান্য কিছু বৃষ্টি হলেও উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এখনও বৃষ্টিহীন। প্রায় খরার মতো পরিস্থিতি চলছে। চা গাছে পাতার দেখা মিলছে না। তাই ফার্স্ট ফ্লাশের মতো সেকেন্ড ফ্লাশেও মার খাওয়ার অবস্থা হয়েছে।

চা চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরে ৮০ শতাংশ ছোট চা বাগান তাপদাহে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। গাছ শুকিয়ে মরেছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম অব স্মল টি গ্রোয়ার্স’-এর চেয়ারম্যান রজত কার্জি বলেন, “উত্তরের ৮০ শতাংশ চা বাগান তাপদাহে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর এলাকার চা বাগান নষ্টের পথে।” চা চাষিদের কয়েকজন জানান, প্রতি বছর উত্তরে শীতের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়। ওই বৃষ্টির জল মিলতে ছেটে দেওয়া চা গাছে নতুন পাতার দেখা মেলে। দু’বছর থেকে আবহাওয়ার স্বাভাবিক ছন্দের তাল কেটেছে। শীতে বৃষ্টি মেলেনি। উলটে শীত শেষ হতে লাফিয়ে বেড়েছে তাপমাত্রা। এবার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অথচ বাগানে ভালো মানের চা পাতা উৎপাদনের জন্য ৩১ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং দিনে রোদ, রাতে বৃষ্টি দরকার। সেটা না মেলায় গরমে চা গাছ ঝলসে শুকিয়ে মরছে। চাষিরা ডিজেলে পাম্প চালিয়ে কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করে চা বাগান রক্ষার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও লাভ হচ্ছে না। পাম্পে জল মিলছে না।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “উত্তরের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমার ৪১ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে ছোট চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে তাপদাহে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ হাজার হেক্টর এলাকার চা বাগান। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর এলাকার চা বাগান ঝলসে শুকিয়ে পুরোপুরি নষ্ট হতে বসেছে।” তিনি জানান, আবহাওয়ার জন্য ফার্স্ট ফ্ল্যাশের পর সেকেন্ড ফ্ল্যাসেও চা শিল্পে মন্দার ছায়া প্রসারিত হতে চা চাষিরা দিশাহারা হয়েছেন। অনেকে চা বাগানের আশা একরকম ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলেও ঝলসে যাওয়া চা গাছ স্বভাবিক হতে কয়েক মাস সময় চলে যাবে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *