উত্তরের সাফল্যের দিনেও পুরোনো প্রশ্ন

উত্তরের সাফল্যের দিনেও পুরোনো প্রশ্ন

শিক্ষা
Spread the love


বিদ্যুৎ রাজগুরু

সাধারণের স্কুল কি ছুটির স্কুলে পরিণত হতে চলেছে? মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর দিন ওই প্রশ্ন তাড়া করছে বারবার। উত্তরবঙ্গ থেকে এবার রাজ্যে প্রথম মাধ্যমিকে। তবু ছুটি নিয়ে উত্তরবঙ্গে প্রতিবারের মতোই অনেক প্রশ্ন, অনেক ক্ষোভ।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি ঘোষণা করেছে৷ তবে কবে স্কুল খুলবে, তার কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই৷ শিক্ষক হিসাবে যখন শিক্ষার্থীদের নোটিশ দিয়ে জানাচ্ছিলাম, কবে থেকে স্কুল ছুটি হবে, তখন নিষ্পাপ সরলমনা ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন ছুড়ে দিল, ‘স্যর কবে স্কুল খুলবে বললেন না তো! কীভাবে জানব, কোন দিন থেকে স্কুলে আসব?’

ওদের কোনও উত্তর সেদিন দিতে পারলাম না৷ একজন শিক্ষক হিসাবে খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে৷ স্কুলগুলোও আজ মনে হচ্ছে কলকারখানার মতো লক আউট হয়ে যাচ্ছে৷ কবে খুলবে জানে না কেউ৷ সব মালিকের মর্জির উপর৷

একদা লিও টলস্টয় বলেছিলেন, ‘মানুষের অজ্ঞানতার মধ্যে সরকারের শক্তি নিহিত রয়েছে, সরকার সেটা জানে। সেজন্য সরকার সত্যিকারের জ্ঞানচর্চার বিরোধিতা করে।’ সেই ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলছে৷ আমাদের রাজ্যে অভিযোগ, ছুটিসংস্কৃতি ক্ষয়িষ্ণু বিদ্যালয় ব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। সরকার পোষিত বিদ্যালয়ের কার্যকরী শিখন দিবস কমে যাচ্ছে হুহু করে। কর্মসংস্কৃতি বিষয়ে গালভরা কথা আজ কথার-কথা।

প্রতিবারই একই অবস্থা দেখছি আমরা। কোনও ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত বৈচিত্র্যের তোয়াক্কা না করেই একসঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে দিচ্ছে শিক্ষা দপ্তর। এতে কি সাধারণের বিদ্যালয় ব্যবস্থাকে অন্তর্জলি যাত্রায় পাঠানো হচ্ছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে। রাজ্যে নানা অংশের জলহাওয়া এক হতে পারে না। সেটা গুলিয়ে ফেলে স্কুলে গ্রীষ্মাবকাশ সর্বজনীন করা কতটা যুক্তিযুক্ত ভাবতে হবে।

প্রচণ্ড গরমের দিনগুলিতে স্নেহশীল শিক্ষার্থীদের কথা ভাবাটা অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু ছুটির আদেশনামাও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তন করা উচিত। আবহাওয়া নির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের উপাদান সমূহের অহরহ পরিবর্তন। তা মোটেই স্থায়ী নয়৷

ভূমিরূপের বৈচিত্র্যের সঙ্গে জলবায়ুর বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে স্কুলগুলোর পরিচালন সমিতি ছুটির তালিকা প্রস্তুত করে। একটা সময় ছুটির তালিকা প্রস্তুতিতে দারুণভাবে অগ্রাধিকার পেত এলাকার আবহাওয়া- জলবায়ু ও কৃষিনির্ভর গ্রামীণ এলাকার শস্য রোপণের বিষয়টি। এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বিদ্যালয় শিক্ষার বার্ষিক ছুটির তালিকা তৈরির রেওয়াজ ছিল।

গ্রামীণ কৃষিপ্রধান অঞ্চলে বর্ষার সময়টা ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। আজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভৌগোলিক ব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অবস্থা কিংবা কৃষিনির্ভর অর্থনীতির কোনও দিকটিকেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। ছুটি সংস্কৃতি, সরকারি নীতি আর ভোগসর্বস্ব সমাজ সাধারণের বিদ্যালয় ব্যবস্থার বুনিয়াদকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করছে।

‘এরা যত বেশি পড়ে তত বেশি জানে, তত কম মানে’ এমন আশঙ্কায় উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা বন্ধ করে দিয়েছিল হীরক রাজা। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রচার হয়েছিল ‘লেখাপড়া করে যে অনাহারে মরে সেই’, তার প্রতিচ্ছবি বাংলায় না দেখলেই ভালো।

(লেখক ফাঁসিদেওয়ার শিক্ষক)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *