‘উত্তরপ্রদেশ যাচ্ছি’, খুনের আগের দিন বাবাকে বলেও ট্রেনে ওঠেনি দেশরাজ, কৃষ্ণনগর ছাত্রী খুনে নয়া মোড়

‘উত্তরপ্রদেশ যাচ্ছি’, খুনের আগের দিন বাবাকে বলেও ট্রেনে ওঠেনি দেশরাজ, কৃষ্ণনগর ছাত্রী খুনে নয়া মোড়

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


অর্ণব দাস, বারাকপুর: কৃষ্ণনগরের ছাত্রী খুনে চাঞ্চল্যকর মোড়! ঘটনার আগের দিন ট্রেনে উত্তরপ্রদেশের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল অভিযুক্ত দেশরাজের। টিকিট কেটে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা, পেশায় বিএসএফ জওয়ান রগুবিন্দর প্রতাপ সিং। শুধু তাই নয়, ট্রেনে উঠেছে বলেও বাবাকে ফোনেও জানান দেশরাজ। কিন্তু পরের দিনই কৃষ্ণনগর মানিকপাড়ার বাসিন্দা ঈশিতা মল্লিকে ঘরে ঢুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করেন অভিযুক্ত দেশরাজ। আর এই ঘটনায় রীতিমতো হতবাক পরিবার। তবে, ছেলে দোষী হলে কঠোর শাস্তি হোক বলেই মঙ্গলবার ফোনে জানিয়েছেন রগুবিন্দর। এদিকে আবার প্রতিবেশীরা বলছেন, ”রগচটা ছিলেন দেশরাজ। অনেকেই তাঁকে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া করতে শুনেছে।”

অভিযুক্তর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ও স্থানীয়দের থেকে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের বাসিন্দা রগুবিন্দর প্রতাপ সিং আদপে বিএসএফ কর্মী। ২০১৫ সালে তিনি ডেপুটেশনে  হরিণঘাটায় এনডিআরএফে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের জেঠিয়া থানার অন্তর্গত পলাশী-মাঝিপাড়া পঞ্চায়েতের ধরমপুর কলোনির হোস্টেল গেটে সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। ছেলে দেশরাজ ও মেয়ে দুজনকেই ভর্তি করান কাঁচড়াপাড়া কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। কাজের সূত্রে, বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকা হত না রগুবিন্দরের। তাঁর স্ত্রী পুনমদেবী সন্তানদের নিয়ে থাকতেন সেখানে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়ে ও মা পুনম মিশুকে ছিল। তাঁরা হোস্টেল গেট এলাকায় হাঁটতে বেরনোর সময় চেনা পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হলে সবসময় কথা বলতেন। তবে অভিযুক্ত ছেলে দেশরাজ কারোর সঙ্গেই তেমন মেলামেশা করত না। বাড়িওয়ালা সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, “পাঁচ বছর হল ওরা ভাড়া থাকছে। কখনও তেমন কিছু বুঝিনি। তবে মা-মেয়ের সঙ্গে ছেলেকে ঝগড়া করতে শুনেছি।” একই কথা জানিয়েছেন প্রতিবেশীরাও। তাঁদের মত, ‘খুবই রুঢ় স্বভাবের ছিলেন দেশরাজ।’ আর সেই রাগ থেকেই স্কুলের সহপাঠী ঈশিতাকে খুন বলে মনে করছেন পাড়া প্রতিবেশীরাও।

অভিযুক্তর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণীতে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের সেনাস্কুলে মেয়েকে ভর্তি করাতে পুনমদেবী চলতি মাসের ১৩তারিখ ট্রেনে উঠে পরেরদিন গোরখপুরের বাড়িতে পৌঁছেছিল। তখন যেতে না চাওয়ায় ধরমপুরের ভাড়া বাড়িতে একাই থাকছিলেন দেশরাজ। এরই মধ্যে সোমবার অর্থাৎ খুনের ঘটনার আগের দিন রবিবার সকালে বাবাকে ফোনে দেশরাজ গোরখপুরের বাড়ি যাবে বলে জানায়। শুধু তাই নয়, সেদিনেরই টিকিট কেটে দিতে বলে। ছেলের কথা মতো রগুবিন্দরও পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে দিয়েছিল। দেওরিয়া সদর যাওয়ার সেই ট্রেন নৈহাটি থেকে দুপুর ৩টে ১৫ ধরার কথা ছিল অভিযুক্তর। কিন্তু আদৌতে তা হয়নি।

দেশরাজের বাবা রগুবিন্দর প্রতাপ সিং ফোনে জানিয়েছেন, “২০২২সালে ফের বিএসএফে যোগ দিয়েছি। বর্তমানে রাজস্থানের জয়লমিরে পাকিস্তানের বর্ডারে কর্মরত রয়েছি। ছেলে কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি কলেজের ভর্তি হয়েছিল। ২৪ তারিখ ছেলে ফোনে জানিয়েছিল ট্রেনে উঠে গিয়েছে। বলল, ফোনে সমস্যা হচ্ছে। ভেবেছিলাম, দীপাবলিতে ফোন কিনে দেবো। পরেরদিন থেকে ছেলেকে ফোন করলে বন্ধ পাই।” তবে ছেলের সঙ্গে খুব একটা কথা হতো না রগুবিন্দরের। তিনি জানান,”প্রয়োজন না হলে ছেলের সঙ্গে কথা হত না।” তবে এই ঘটনায় ছেলের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাবা। তিনি জানিয়েছেন, ”আমার ছেলে হোক বা আমি হই, দোষ করলে আইন মেনে শাস্তি হওয়া উচিত। তাই, ছেলে দোষী হলে ওর শাস্তি হোক চাইবো। তবে নিহত মেয়েকে আমি চিনতাম না। ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কি না, তাও জানতাম না।”

ফোনে একই কথা জানিয়েছেন অভিযুক্তর মা পুনম সিং। তিনি বলেন, “মেয়েটিকে কখনও দেখিনি, চিনতাম না। আমি ভাড়া বাড়িতে ছিলাম না। তাই ছেলে বিরুদ্ধে ওটা অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলতে পারবো না। ২৪তারিখের ট্রেনে ছেলের উত্তরপ্রদেশের দেশের বাড়ি আসার কথা ছিল এটুকু জানি।” 



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *