নতুন করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সংহত হওয়ার প্রয়াস, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কেন্দ্রের ওপর চাপ সৃষ্টি, অনেক বিতর্কের পর পহলগাম বাদ দিয়ে শুধু অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে শাসক শিবিরের সম্মতি ইত্যাদি ছাপিয়ে জাতীয় খবরের চর্চায় চলে এসেছেন জগদীপ ধনকর। এই প্রথম দেশের কোনও উপরাষ্ট্রপতি তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন। তাঁর তৈরি এই ব্যতিক্রমী নজিরটি এখন আতশকাচের তলায়।
পদত্যাগপত্রে তিনি স্বাস্থ্যের কারণে এবং চিকিৎসা জগতের পরামর্শ কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে রহস্য আরও বাড়ছে সর্বভারতীয় শাসকদলের হিরণ্ময় নীরবতায়। তাতে অনুমান করা যেতেই পারে যে, ধনকরের পদক্ষেপটি বিজেপি নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। দেশের রাজধানীর রাজনৈতিক মহল, সংবাদ জগৎ ও আমলাতন্ত্র বিস্মিত, হতবাক ও বিভ্রান্ত। তাঁর দেখানো পদত্যাগের কারণে সন্দেহ বাড়িয়েই দেয়।
প্রথমত, এই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে যদি উপরাষ্ট্রপতি পদমর্যাদার একজন ঠিক করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই তা সুচিন্তিত, পূর্বপরিকল্পনা ছিল। সেক্ষেত্রে বাদল অধিবেশন শুরুর আগে তিনি ইস্তফা দিতে পারতেন। তাঁর সমস্যা আগাম জানাতে পারতেন কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতিকে। তা না করে অধিবেশন শুরু হওয়ার দিন হঠাৎ রাতে রাষ্ট্রপতিকে ইস্তফাপত্র প্রেরণ খুব স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে হয় না।
এই মনে না হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ আছে। বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন তিনি বরাবরের মতো স্বভাবসুলভভাবে রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা করেছেন। অসুস্থতা বা অন্য কোনও সমস্যার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তারপর হঠাৎ রাত হতে আগাম কাউকে কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া কিছুটা বিসদৃশই বটে। দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক অতীতে তাঁর অসুস্থতা সামনে এসেছে ঠিকই, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু সেই অসুস্থতায় কখনও মনে হয়নি যে তিনি শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
স্বভাবগতভাবে ধনকর স্বাধীনচেতা। প্রায় সব ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব মতামত আছে। কর্মকাণ্ডে, আচরণে, মন্তব্যে বিতর্ক করতেও পারেন। সংবাদ শিরোনামে থেকে যাওয়ার মতো পদক্ষেপ করেন বা কথা বলেন। উপরাষ্ট্রপতির ভূমিকায় তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এতটাই যে, তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার পরিকল্পনা করেছিল বিরোধীপক্ষ। সম্প্রতি কিছু বিষয়ে তাঁর স্বাধীন মতামত প্রকাশ কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক শিবিরের জন্য অস্বস্তির কারণ ঘটিয়েছে।
যেমন সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, রায়, নির্দেশ ইত্যাদিকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সংসদীয় পরিকাঠামোকে বিচার ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সংঘাতের বার্তা দিয়েছে। বিজেপির ভাবনার সঙ্গে এই ধরনের মন্তব্য পুরোপুরি সাযুজ্যপূর্ণ নয়। শীর্ষ আদালতের কিছু পদক্ষেপ কেন্দ্রকে বিড়ম্বনায় ফেললেও বিচার ব্যবস্থার গরিমা ক্ষুণ্ণ হতে পারে- এমন মন্তব্য বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত।
খুব সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে সংসদে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া ধনকরের অপছন্দ ছিল। তিনি এই ইমপিচমেন্টের বিরোধী ছিলেন। তা সত্ত্বেও সরকার ওই প্রক্রিয়ায় এগিয়েছে শুধু নয়, তাতে বিরোধী দলগুলির সহায়তা নিয়েছে। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে প্রক্রিয়াটি নিয়ে তাঁর তোলা কিছু পদ্ধতিগত প্রশ্নকে শাসক শিবির আমল দেয়নি। ফলে সাংসদদের সই করা ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পেশ হওয়ার দিনই ধনকরের ইস্তফায় দুয়ে দুয়ে চার করা যেতেই পারে।
অনুমান করা যেতেই পারে যে, ইমপিচমেন্ট নিয়ে অসন্তোষের কারণে প্রস্তাবটি পেশ হওয়ার পরপরই বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে পহলগামে নিরাপত্তার অভাব ও ভারত-পাক যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবির ব্যাপারে দীর্ঘ বক্তৃতা করার সুযোগ দেন ধনকর। লোকসভায় কিন্তু একইদিনে একই বিষয়ে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিকে। ফলে উপরাষ্ট্রপতির ইস্তফা নিয়ে চর্চা চলতেই থাকবে।
The put up ইস্তফার অঙ্ক appeared first on Uttarbanga Sambad.