নব্যেন্দু হাজরা: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিচালনা ভার কি ধাপে ধাপে বেসরকারি হাতে চলে যেতে চলেছে! আগামী ৩১ জুলাই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোন বেসরকারি সংস্থা পাবে, তার দরপত্র খোলা হবে বলে খবর। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এরপর কি অন্যান্য দায়িত্বভারও কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে! তবে মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকে যে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি। সূত্রের খবর, কম্প্রিহেনসিভ ম্যানুয়াল মেনটেনেন্স কন্ট্রাক্টের দায়িত্ব একটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হবে।
এদিকে, এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার রেলকে সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এটা তারই অঙ্গ। রেলকে নষ্ট করছে বিজেপি। আমাদের সরকার ও দল এটায় নজর রাখছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সফল রেলমন্ত্রী। রাজ্য সরকার যথা সময়ে তাদের বক্তব্য জানাবে।’’ উল্লেখ্য, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি নিয়ে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন আগ্রহ দেখিয়েছিল। এ বারও তারাই অন্যতম আগ্রহী সংস্থা বলে খবর।
বউবাজার অংশকে জুড়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ পথে কবে পরিষেবা শুরু হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তার মধ্যেই মেট্রো পরিচালনার ভার বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে। এরপর যদি মেট্রো অপারেশনের দায়িত্বও বেসরকারি হাতে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ভাড়াবৃদ্ধিরও একটা আশঙ্কা রয়েছে। দিল্লি মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড একটি স্বশাসিত সংস্থা। লাভ-ক্ষতির হিসেবের ভিত্তিতে তারা দেশের বিভিন্ন শহর ছাড়াও বিদেশি কিছু শহরে মেট্রো নির্মাণ ও পরিচালনা ক্ষেত্রের নানা সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত পরিষেবা দিচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই কলকাতা মেট্রোর শীর্ষ কর্তাদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে বিশেষ আগ্রহী। গতবছরই সবকটি মেট্রোর কর্মী ইউনিয়ন এ নিয়ে আপত্তি তোলায় বিষয়টি সাময়িক ভাবে থমকে যায়। কিন্তু ফের তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে মেট্রোসূত্রে খবর। কয়েক মাস আগে বেসরকারিকরণ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করায় মেট্রো ভবনের এক শীর্ষ আধিকারিককে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
বর্তমানে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় যথেষ্ট কর্মীর অভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিকঠাক না হওয়ার সমস্যা রয়েছে। এমনকি প্রয়োজনের তুলনায় মোটরম্যানের সংখ্যাও অনেকটাই কম। তবে অন্য রেল থেকে ধাপে ধাপে মোটরম্যান মেট্রোয় আনা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। এই অবস্থায় বেসরকারিকরণ সংক্রান্ত দরপত্র খোলার খবরে মেট্রোর অন্দরে শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মেট্রোর বাম কর্মী সংগঠন আপত্তির কথা আগেই জানিয়েছিল। কলকাতা মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বেসরকারিকরণ নিয়ে বিরোধিতা থিতিয়ে যেতেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ আবার এ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে আমরা শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছি। আগামিদিনেও করা হবে। একমাত্র কলকাতা মেট্রোই ভারতীয় রেলের মধ্যে রয়েছে। সেটাকে কোনওভাবেই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে দেবো না।’’ যদিও, মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।