ইভেন্ট সংস্থাকে দিয়ে আর জি করে আন্দোলন! জনতার অর্থে সাজানো চিত্রনাট্য?

ইভেন্ট সংস্থাকে দিয়ে আর জি করে আন্দোলন! জনতার অর্থে সাজানো চিত্রনাট্য?

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার: নামেই স্বতঃস্ফূর্ত-সহজাত। আদতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় মোটা টাকা ঢেলে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা। জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্টের ‘আর জি কর আন্দোলন’-এর চিত্রনাট্য ফাঁস হতেই চরম অস্বস্তিতে ফ্রন্টের সদস্য জুনিয়র ডাক্তাররা। ঝুলি থেকে বিড়াল বেরতেই জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্যদের দিকে আঙুল তুলেছে নাগরিক সমাজও। এই আন্দোলনকে সহজাত, আবেগপ্রবণ ভেবে যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন। সত্য ফাঁস হতে তারা বিস্মিত, ক্ষুব্ধ। এই ঘটনা সামনে আসতেই তৃপ্তিকণা দাস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, টাকা ঢেলে আন্দোলনের শুটিং। ইডিকে এই ঘটনায় অবিলম্বে যুক্ত করা উচিত। অন্যদিকে অমলেন্দু ভট্টাচার্যর বক্তব্য, “এবার বুঝতে পারছি সরকার বিরোধী এক ষড়যন্ত্র ছিল এটা। যাঁরা আন্দোলনের চিত্রনাট্য সাজিয়ে টাকা ঢেলে এই কাজটা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চাই।”

উল্লেখ্য, গত আগস্টে আর জি কর কাণ্ডের পর দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করেছিল সঞ্জয় রায়কে। সে সময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে রাস্তা মুখর করেছিল একদল। প্রশ্ন উঠছে, ওই স্লোগানও কি তবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির তৈরি করা? ‘ইনোভেডরস’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে আর জি কর আন্দোলন পরিচালনা ও প্রচারের জন্য জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট দফায় দফায় টাকা দেয় বলে অভিযোগ।

‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানও ইভেন্ট সংস্থাটির তৈরি করা বলে অভিযোগ। আগস্টে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু হতেই বাজার থেকে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করে কোটি কোটি টাকা তোলে জেডিএফ বা জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্ট। দেখা যায়, মোমবাতি মিছিল, দেওয়াল-রাস্তা জুড়ে একের পর এক গ্রাফিত্তি। এরপর ড্রোন ক্যামেরায় সেইসব ভিডিও তুলে সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সুচারুভাবে দেখানোর চেষ্টা হয়, শহরজুড়ে যেন একটা প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, অর্থ ঢেলে তৈরি করা হয়েছিল সেই নকল ঝড়। এই সবকিছুর নেপথ্যে বেসরকারি একটি এজেন্সি। গত ৪ অক্টোবর শুভদীপ সরদারের অ্যাকাউন্ট থেকে সেই বেসরকারি এজেন্সি ইনোভেডরসকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

এখানেই শেষ নয়, ওইদিনই ইনোভেডরস-এর কর্ণধার অর্ণব পালের অ্যাকাউন্টে আরও ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা পাঠানো হয় চেকের মাধ্যমে। সাংবাদিক তমাল সাহা তাঁর সংবাদ পোর্টালে ফাঁস করেছেন এই তথ্য। ইনোভেডরসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আর জি কর নিয়ে আন্দোলন অ্যারেঞ্জ করার। তার সঙ্গে আন্দোলনের মনোগ্রাহী ছবি-ভিডিও তুলে প্রচারের। প্রশ্ন উঠছে, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ভাড়া করতে হয়? তমাল সাহা জানিয়েছেন, “আন্দোলনের নামে এটা ছিল পুরোটাই জুনিয়র ডাক্তারদের তৈরি করা একটা প্রতিবাদের নাটক। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে ছবি-ভিডিও তুলে আন্দোলনকারীরা তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সমাজমাধ্যমে। যাতে মানুষের মধ্যে জোর করে একটা অসহিষ্ণুতা তৈরি করা যায়।” আন্দোলনের নামে জুনিয়র ডাক্তারদের এই গর্হিত কাজে ক্ষুব্ধ সমাজের নানা স্তরের মানুষ।

বিস্তর গণ্ডগোল দেখা গিয়েছে জনগণের থেকে তোলা টাকা খরচের ক্ষেত্রেও। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্টের খোলা অ্যাকাউন্টে টাকার লেনদেনের একটা হদিশ পাওয়া গিয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৪ এর ১ অক্টোবর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলনের জিগির তুলে ওই অ্যাকাউন্টে জনগণের কাছ থেকে ঢুকেছে দু’কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। এক সময় এই টাকা তোলার প্রশ্ন উঠতেই, জুনিয়র ডাক্তাররা জবাব দিয়েছিল, অভয়ার বিচার চালিয়ে নিয়ে যেতেই নাকি এই টাকা তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেকথা তো ডাহা মিথ্যা। আদৌ এই টাকা তুলে অভয়ার বিচারই চায়নি ফ্রন্ট। তা হলে? অন্তর্তদন্তে প্রকাশ, কেস লড়তে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, বৃন্দা গ্রোভাররা এক টাকাও নেননি। জনগণের থেকে তোলা ওই টাকা থেকে জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্ট নিজেদের স্বার্থে কেস লড়ছিল। সে কেসের আইনজীবী ইন্দিরা জয় সিং। তা লড়ার জন্য সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দুই লপ্তে ১১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে ইন্দিরা জয় সিংকে।

“মেডিক্যাল কলেজগুলোয় স্টুডেন্টস ইউনিয়নের নির্বাচন হচ্ছে না কেন?” ওই টাকা ঢেলে তাই নিয়ে কোর্টে সওয়াল করতে বলা হয় ইন্দিরা জয় সিংকে। সে সময় সলিসিটির জেনারেল তুষার মেহতা পর্যন্ত বলেছিলেন, “দয়া করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে কথা বলুন। ফোকাস নষ্ট করবেন না।” মাসখানেক আগেই বাংলাদেশে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কার্যত সেই কায়দাতেই কলকাতাকে অশান্ত করতে নেমেছিল একটি বিশেষ গোষ্ঠী। এই বক্তব্যের সমর্থনেও মিলেছে একাধিক প্রমাণ। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা ছেড়ে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে ওই বিশেষ বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেছিল জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্ট।

জানা গিয়েছে, এর নেপথ্যে নাকি এক আইনজীবীর সুযোগসন্ধানী বুদ্ধি। যাতে সম্পূর্ণ টাকাটা এখান থেকে চালনা করা যায় সেটাই চেয়েছিলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, দেখা যাচ্ছে ফ্রন্টের জুনিয়র ডাক্তাররা যখন অনশনে বসেছিলেন, তখন এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ লক্ষ টাকা ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্টের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। গণ্ডগোল সেখানেও। থার্ড পার্টি সোর্সের মাধ্যমে এমনভাবে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে যাতে কে টাকা দিয়েছে তার কোনও হদিশ না পাওয়া যায়! শুধু তাই নয়, এই জমা দেওয়া টাকায় গ্রাহকের নাম ‘ডব্লুবিজেডিএফ- কলকাতা অপারেশন!’ এই নাম শুনেই পুরো বিষয়টি জলের মতো পরিষ্কার অনেকের কাছে। কলকাতা অপারেশন নাম সামনে আসার পর অনেকেই নিশ্চিত বাংলাদেশে যেভাবে অশান্তি তৈরি করা হয়েছিল, তেমনই কিছু একটা ‘চাল’ ছিল আর জি কর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্টের। উল্লেখ্য, বিপুল এই টাকা দিয়েছে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন। এখন, সেই সমস্ত সংগঠনের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ভুতুড়ে। কোনওটা চার বছর ধরে নিষ্ক্রিয়। প্রশ্ন উঠছে, কী এমন ঘটল যে, নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট রাতারাতি এতগুলো টাকা পাঠাল? নাগরিক সমাজ বলছে, পুরোটার নেপথ্যে ছিল একাধিক সুযোগসন্ধানী মস্তিষ্ক। যাঁরা চেয়েছিল বাংলা তথা কলকাতায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *