আমেরিকা ফেরতদের লাইনে গুজরাটিরা

আমেরিকা ফেরতদের লাইনে গুজরাটিরা

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


 

প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছে বেশ কিছুদিন। আমেরিকা থেকে খেদিয়ে দেওয়া দেশোয়ালিদের ভিড়ে এত গুজরাটি কেন? গোটা দেশের মধ্যে মডেল যে রাজ্য, সেই গুজরাট থেকে এভাবে দলে দলে লোকজন দেশান্তরী হল কেন? দেশান্তরী, আবার চূড়ান্ত বেআইনিভাবে পালিয়ে। যে গুজরাট সুশাসন আর বিকাশের চ্যাম্পিয়ন বলে সরকারি প্রচারে অহরহ তুলে ধরা হয়, বিদেশের কেষ্টবিষ্টুরা এলে তাঁদের একবার করে গুজরাট দর্শন করানো যখন রেওয়াজ, তখন অমৃতসরের প্লেনে এত গুজরাটি কেন? হাতে- পায়ে শেকল পরার লাইনে মডেল রাজ্যের লোক!

সিঙ্গুর থেকে টাটার ন্যানো কারখানা গুজরাটে চলে যাওয়ার পর এমনকি কমরেডরাও কথায় কথায় গুজরাট নিয়ে বুক চাপড়াতেন। তখন থেকেই বলতে গেলে বাঙালির কাছে পশ্চিম উপকূলের রাজ্যটি একটা স্বপ্নরাজ্য। প্রথম দুই দফায় যে বিতাড়িত ভারতীয়রা প্নেন থেকে নেমেছে তাদের মধ্যে গুজরাটি ৫২ জন। আরও আসছে। একটা হিসেব বলছে, ২০২৩ সালে মার্কিন মুলুকে যে ৬৭ হাজার ৩৯১ অবৈধ ভারতীয় ছিলেন তাঁদের মধ্যে ৪১ হাজার ৩৩০ জনই গিয়েছিলেন মোদিজির রাজ্য থেকে। এ জন্য কম ঝুঁকি নিতে হয়নি তাঁদের।

২০২২ সালে জগদীশ প্যাটেল বেআইনিভাবে কানাডা সীমান্ত পেরিয়ে তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলেকে নিয়ে ভয়ংকর তুষার ঝড়ে পড়ে স্রেফ জমে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। এমন জগদীশরা ওদেশে কম নেই। কাজের জন্য, রোজগারের আশায় মডেল রাজ্য ছেড়ে তাঁরা আমেরিকায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গান্ধিনগরের কলোলের ব্রিজকুমার যাদব ট্রাম্প ওয়াল নামে পরিচিত মার্কিন-মেক্সিকো সীমানা পাঁচিল পেরোতে গিয়ে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। গুরুতর জখম হন স্ত্রী পূজা আর তিন বছরের ছেলে তন্ময়।

গুজরাটের অর্থনীতি নিয়ে অনেকদিনই মাথা ঘামাচ্ছেন ফরাসি নিবন্ধকার ক্রিস্তোফার জাফ্রেলো। আমার মতো তাঁরও প্রশ্ন একই। তিনি সরকারি নানা স্ট্যাটিস্টিক্স ঘেঁটে বলছেন, ২০২২-’২৩ সালে দেশের মানুষের আয়ের তুলনায় গুজরাটের বাসিন্দাদের গড় বেশি। এরই পাশাপাশি কিছু চমকে দেওয়া তথ্য হল, এ রাজ্যের ৭৪ শতাংশ মজুরের কোনও লিখিত নিয়োগপত্র নেই। সেখানে ঠিকা মজুরের দিনপ্রতি আয় ৩৭৫ টাকা। এমনকি বিহারে এর থেকে বেশি পান দিনমজুররা, ৪২৬ টাকা। একমাত্র ছত্তিশগড়ে এই তালিকায় গুজরাটের পিছনে, ২৯৫ টাকা।

আরও একটা পরিসংখ্যানে চোখ রাখা যাক। গতবছরের এপ্রিল-জুনের হিসেব। গুজরাটের বেতনভুক কর্মচারীদের গড়ে বেতন ছিল ১৭,৫০৩ টাকা। বেতনের সর্বভারতীয় গড় ছিল ২১,১০৩ টাকা। এই তালিকায় আমাদের রাজ্যও পিছনে ফেলেছে মোদির রাজ্যকে। কৃষিশ্রমিকের রোজকার রোজগার ২৪২ টাকা। অকৃষি ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ২৭৩ টাকা গড়ে। দেশের লিস্টে গুজরাট তলা থেকে দ্বিতীয় স্থানে। নির্মাণশ্রমিকদের গড়ে আয় লিস্টের একেবারে তলা থেকে তৃতীয় স্থানে। আদতে গুজরাটে ধনবান যত, তার বহুগুণ হাভাতেরা। শিল্প বলতে যা লগ্নি হচ্ছে তা বড় বড় পুঁজিনির্ভর, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। ফলে বেকারি মাত্রাছাড়া, চাকরির সুযোগ একান্তই সীমিত।

এইসব শুকনো সংখ্যার কচকচিতে মুখে হাসি ফিরে আসবে না কেতুল প্যাটেলের। মাত্র এক বছর আগে সুরাটে তাঁর ফ্ল্যাট বিক্রি করে আমেরিকায় সপরিবার গিয়েছিলেন বেআইনি পথে। ধরা পড়ে স্ত্রী মিত্তলবেন, ছেলে হেয়াংশের সঙ্গে  তিনি হাতে-পায়ে বেড়ি নিয়ে ফিরেছেন অমৃতসরে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *