স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও খড়গপুর: ভাইরাল হওয়া ভিডিও ভুয়ো, তাঁর নয়। সাফ জানিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পুরো ঘটনার তদন্ত চেয়ে শনিবার লালবাজার সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক চক্রান্তও দেখছেন প্রাক্তন সাংসদ। বিতর্কিত ভিডিও কাণ্ডে শুধু পুলিশে অভিযোগই নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে দিলীপ বলেছেন, ‘‘এটা আমার ভিডিও নয়। আমি নই। আমি বলছি এটা ফরেনসিকে পাঠান। কারা নোংরামি করছে আমার সঙ্গে সেটা চিরতরে শেষ হওয়া দরকার। আমি শেষ দেখে ছাড়ব।’’
দিলীপ এদিন বলেন, বদনাম করতেই এই ‘ফেক’ ভিডিও করা হয়েছে। পুরোটা তদন্ত হওয়া নিয়ে তাঁর দাবি, “আমাকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক কেরিয়ার কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে।” জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম)-কে চিঠি দিয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
অসমর্থিত সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ইতিমধ্যে ভিডিওটি ফরেনসিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ মহলে দিলীপ বলেছেন, কোথা থেকে কী হয়েছে সব খবর এসেছে। দলের মধ্যে এসব চলতে পারে না। সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগে দিলীপ লিখেছেন, তাঁর সম্মানহানি করতে এবং রাজনৈতিকভাবে কালিমালিপ্ত করতে সোশাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের পিছনে কারা রয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হোক। এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হোক।’ ষড়যন্ত্রকারীদের আইনানুযায়ী শাস্তির আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, শনিবার সন্ধ্যাতেই খড়গপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন দিলীপ। বিতর্কিত ভিডিও নিয়ে সেখানেও মুখ খোলেন। বলেন, ‘‘ভিডিওতে পুরুষ চরিত্রের সঙ্গে আমার নাম যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ব্যক্তিচরিত্র হনন ও ভাবমূর্তি ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকদিন থেকে ষড়যন্ত্র চলছে। সেই চক্র থেকে এটা করা হয়েছে। গত দু-তিন মাস ধরে আমার বিরুদ্ধে ব্যাপক চক্রান্ত হয়েছে। আমি তার শুধু জবাব দিয়েছি। টাকা-পয়সা দিয়ে চক্রান্ত করে বদনামের চেষ্টা করা হচ্ছে। সত্য সামনে আসুক।’’ দিলীপ আরও বলেন, ‘‘রাজনীতিতে এটা নতুন নয়। এই ধরনের চক্রান্ত চলতেই থাকে। অনেক বড় বড় নেতাদের,বড় বড় মানুষের বিরুদ্ধে এইধরনের চক্রান্ত হয়। এটা হচ্ছে শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করে তাকে শেষ করার। আমাদের পার্টিতেও ৫-৬ বছর আগে বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে একজন মহিলাকে দিয়ে বলানো হয়েছিল। তারমধ্যে অনেক উচ্চ নেতৃত্ব ছিলেন। ইদানিংকালে সন্ন্যাসী মহারাজের ব্যাপারে এরকম হয়েছে। ১২ বছর আগে কোনও মহিলা নাকি তাঁর দ্বারা তাঁর উপর অত্যাচার করেছেন। তিনি স্টেটমেন্ট দিয়ে দেন। সেই নিয়েও বিরাট চর্চা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা লাগাতার হয়। আমাদের পার্টির বরিষ্ঠ নেতা আছেন মাননীয় সঞ্জয় যোশী তাঁর বিরুদ্ধেও এই ধরনের ভিডিও, সিডি করে সারা দেশে ছড়ানো হয়েছিল। এটা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে যখন ফরেনসিক টেস্ট হয় দেখা যায় ওটা ফেক ছিল। আমার ব্যাক্তিগতভাবে যেহেতু আমাকে আক্রমণ করে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে আমি পুলিশের কাছে আইনের কাছে গেছি। আমি দেখতে চাই পুলিশ কি করে। এইধরনের চক্রান্তে কারোর বিরুদ্ধে তো লড়াই করা সম্ভব নয়। টাকা পয়সা দিয়ে চক্রান্ত করে যে কোনও মানুষকে যে কোনও সময় বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই চেষ্টার বিরুদ্ধে আইন আদালত আমাদের একমাত্র রাস্তা। আমি আইনের কাছে গেছি। যারা যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে বদনাম করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক। রাজনীতিতে নোংরামি হয়। কিন্তু কত নোংরামি হবে? কত নিচে নামবে?’’