স্টাফ রিপোর্টার: মোহনবাগান নির্বাচনী জনসভায় শনিবার বড় চমক। সশরীরে হাজির স্বপনসাধন (টুটু) বোস। আগেই জানিয়েছিলেন নির্বাচনে তিনি সৃঞ্জয় বোসের সমর্থনে প্রচারে নামবেন। মোহনবাগান সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে ইস্তফাপত্রও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কার্যকরী কমিটির কাছে। এতদিন শারীরিক অসুস্থতার জন্য হাজির থাকতে না পারলেও শনিবার সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতার আহিরীটোলার দোলনা পার্কের সৃঞ্জয় বোসের নির্বাচনী সভায় স্বপনসাধন (টুটু) বোস পা রাখতেই মোহন জনতার আবেগ যেন উথলে পড়ল।
শুধু হাজির থাকাই নয়, অনেক প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে গেলেন তিনি। উত্তর কলকাতা মানেই মোহনবাগানের আঁতুড়ঘর। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে মোহনবাগান নিয়ে একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। সেই উত্তর কলকাতার আহিরিটোলা এদিন ছেয়ে গিয়েছিল টুটু বোস ও সৃঞ্জয় বোসের ছবি সহ ‘তোমাকে চাই’ লেখা ব্যানারে। আহিরীটোলার মোহনবাগান জনতার দাবি ছিল এই সভায় তাঁরা টুটু বোসকে দেখতে চান। এদিন স্বপনসাধন বোসকে সভায় হাজির করানোর পর সৃঞ্জয় বোস তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “এখানকার আয়োজকদের অনুরোধ ছিল টুটু বাবুকে আনার। আশা করি আমি আপনাদের আশা পূরণ করতে পেরেছি। সেটা করতে পেরে আমারও ভালো লাগছে। এখানে আসতে পেরে বাবারও হয়তো একইরকম ভালো লাগছে।” সৃঞ্জয় বোসের এই কথা শোনার পর হাততালিতে ফেটে পড়ে উপস্থিত জনতা। সৃঞ্জয় আরও বলেন, “আজকে নির্বাচন হচ্ছে বলে আপনাদের বাড়িতে পয়লা বৈশাখে কার্ড পাঠানো হয়েছে। উত্তরীয় পাঠানো হয়েছে। কই আগের বছরগুলোতে তো এটা হয়নি। আপনারা পয়লা বৈশাখে ক্লাব তাঁবুতে আসার জন্য কবে নেমতন্ন পেয়েছেন। কারণ, গতবার ভোট হয়নি। ‘তাই আপনাদের দরকারও হয়নি। আমার কিন্তু অনেক বছরের অভ্যাস নববর্ষে কিংবা বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠানো। কারণ আমি মনে করি আপনারা আর আমরা একসঙ্গে আছি মোহনবাগান ক্লাবে। তাই সবসময় আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত। শুধু দরকারে আপনাদের ফোন করা বা উত্তরীয় পাঠানো আমার কাজ নয়। আমি সবসময় চাই আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। আপনাদের সঙ্গে থাকতে।”
এদিনের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য, অমিত ভদ্র, শিল্টন পাল, অচিন্ত বেলেলের মতো প্রাক্তন তারকারা। কিছুদিন আগেই দেবাশিস দত্ত জানিয়েছিলেন স্বপনসাধন বোস যদি সচিব পদে দাঁড়ান তাহলে তিনি ভোটে দাঁড়াবেন না। এই প্রসঙ্গে স্বপনসাধন (টুটু) বোস বলেন, “আমি শুনলাম বলা হচ্ছে, আমি সচিব পদে দাঁড়ালে উনি নাকি ভোটে লড়াই করবেন না। এই কথাগুলো বলার মানে। কী আমি জানি না।’ প্রশাসক হিসেবে সৃঞ্জয় বোসের যোগ্যতা নিয়ে বলতে গিয়ে আরও ভবানীপুর ক্লাবের উত্থানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি টুটু বোস। তিনি বলে “আমি ভবানীপুর বলে একটা ক্লাব নিয়েছিলাম। পঞ্চম ডিভিশনে খেলত। ক্লাবটির মালিক আমাকে অনুরোধ করে বলেছিল, ক্লাবটা না নিলে বন্ধ হয়ে যাবে। টুম্পাইকে (সৃঞ্জয়) বলি, ক্লাবটাকে পঞ্চম থেকে প্রথম ডিভিশনে নিয়ে যা। পাঁচ বছরের মধ্যে ও প্রিমিয়ারে নিয়ে গেল ভবানীপুরকে। ওর যদি যোগ্যতা না থাকত তাহলে কি এটা হত। আমার সন্তান বলে নয়, মোহনবাগান আমার তৃতীয় সন্তান। আমি মোহনবাগানকে এমন একজন যোগ্য লোকের হাতে দিয়ে যেতে চাই, যাতে সে আমার মতেই ক্লাবটা চালাতে পারে।”
এদিন উপস্থিত মোহনবাগান সভ্যদের উদ্দেশে প্রাক্তন ফুটবলার শিল্টন পাল বলেন, “একটা সময় আমার কাছে বেশ কয়েকটা ক্লাবের অফার ছিল। আমি তখন বলেছিলাম আমি মোহনবাগানেই খেলব। কিন্তু তারজন্য আমাকে মোহনবাগান সদস্য করতে হবে। মোহনবাগানের জন্য বোস পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। সবসময় ফুটবলারদের পাশে থাকে। যখন খেলোয়াড় ছিলাম তখন থেকেই দেখেছি বিষয়টা।” প্রাক্তন গোলকিপার এদিন আরও বলেন, “আমরা মোহনবাগানিরা কখনও বোস পরিবারের অবদান ভুলতে পারব না। সৃঞ্জয়দাকে দেখেছি ফুটবলারদের জন্য কতটা করেন। আমাদের সময় থেকে দেখছি। আমি শাসকগোষ্ঠীর কাছে প্রস্তব দিয়েছিলাম প্রাক্তন ফুটবলারদের জন্য বসার একটা জায়গা করার জন্য। এতদিন সেই কথা কেউ কানে দেয়নি। এখন দেখছি শাসক গোষ্ঠীর ইস্তাহারে এই প্লেয়ার্স কর্নারের কথা উল্লেৎ করা হচ্ছে। আমার ভোট টুটু সার, টুম্পাইদার জন্য থাকবে।”
এদিন উদ্যোক্তা শমীক সাহা, মনাংশু চট্টোপাধ্যায়দের তরফ থেকে কচি সাহাকে স্মরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সদস্য প্রবীর মিত্র। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘ট্রেনার, টুম্পাইরাই ক্লাব চালাক। এতদিন তো ভালোই ক্লাব চালিয়েছেন ওঁরা। তাহলে অসুবিধা কোথায়। এক সময় আমরা বিরোধিতা করলেও বলছি, উনি ক্লাবের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা নিয়েছিলেন যে ভূমিকাটা প্রয়োজন ছিল। তাই বলছি আমার মনে হয় ওরাই পারবে মোহনবাগানকে চালাতে। ওঁরা থাকলেই ক্লাবের উন্নতি হবে।”