স্টাফ রিপোর্টার: একরাতের বৃষ্টি-বিভীষিকা অধ্যায়ের ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই স্বাভাবিক, চেনা ছন্দে ফিরল মহানগর। রেকর্ড পাঁচ ঘণ্টার টানা বৃষ্টির পর বলতে গেলে রেকর্ড সময়ের মধ্যেই সরানো গেল জমা জল। মোটামোটি বেশিরভাগ জায়গায়ই চেনা রূপ ফিরল কল্লোলিনী তিলোত্তমার। কিন্তু এর মাঝে প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার ও শহরবাসীর নাগরিক সচেতনতার বেহাল দশা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। তা নিয়ে বেশ ক্ষোভপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবার নাগরিকদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্লাস্টিক ফেলে রাখা হচ্ছে যেখানে সেখানে, তা নর্দমায় আটকে যাচ্ছে। আমাদের সিভিক সেন্স কবে আসবে?’’
কলকাতার রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ভর্তি আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ ভয়ংকর হতে বাধ্য, এমনই আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। মুখ্যমন্ত্রী এই আবহেই বুধবার নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ফেলে রাখা হচ্ছে। তা নর্দমায় আটকে যাচ্ছে। আমাদের সিভিক সেন্স কবে আসবে?’’ তিনি উল্লেখ করেন, মেট্রোকেও বারবার বলা হয়েছে, কাজের জন্য রাস্তায় বালি-পাথর যা পড়ে রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”প্রতি পাড়ায় ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে। তারপরও প্লাস্টিকগুলো নালায় ফেলি। কোথাও বাড়ি হচ্ছে। তার ইট-বালি-চুন-সুরকি বর্ষায় ভেসে নালা বন্ধ করে দিচ্ছে।”
বস্তুত, এসব ছাড়াও জোয়ারের জল নিয়ে চিন্তা ছিল। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার রাত দুটো পর্যন্ত খোঁজ রেখেছেন সে ব্যাপারে। আর জমা জল সরানো নিয়েও নজরদারি করেছেন। দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘সাত ঘণ্টার মধ্যে জল ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করতে পেরেছি। বেশিরভাগটাই পরিষ্কার করেছি। এখন পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। দু-একটা লোল্যান্ড (নিচু জায়গা) ছাড়া সব জায়গা থেকে মোটামুটি জল নেমে গিয়েছে।’’ মঙ্গলবার ভোর থেকেই ২৯টি পাম্পিং স্টেশন খুলে দেয় পুরসভা ও সেচদপ্তর। খাস কলকাতার বেশিরভাগ জায়গায় জল সরলেও উত্তর শহরতলির দমদম অথবা গঙ্গা লাগোয়া বাগবাজারের নিচু এলাকায় জল ছিল। কিন্তু রাতেই লকগেট খুলে দেওয়ায় দ্রুত জল নামতে থাকে। এমনকী ঠনঠনিয়ার মতো নিচু এলাকা থেকেও ভোরে জল সরে যায়। কারণ পুরসভা পোর্টেবল পাম্প চালিয়ে গাড়ি করে বৃষ্টির জমা জল সরিয়েছে। পুর তথ্য অনুযায়ী পাম্পিং স্টেশনের বিচারে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল কালীঘাট পাম্পিং স্টেশনে (২৯৭ মিলি)।
ঘটনা হল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরই কালীঘাট, রাসবিহারী, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জের জল সরতে শুরু করে। সকালে জলশূন্য এলাকা। বিভাগীয় মেয়র পারিষদ তারক সিং বলেন, ‘‘রের্কড বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নিকাশি-সহ পুসসভার প্রতিটি বিভাগ একযোগে পথে নেমে মহানগরকে জমা জল থেকে মুক্ত করেছে। এই কৃতিত্ব পুরকর্মীদের। এমনকী সিভিল ও বিল্ডিং বিভাগের কর্মীরাও জমা জল অপসারণ করেন।’’