সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বের তিন জনপ্রিয় লিগ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। তিন লিগের মধ্যে মিল থাকার কোনও কথা নয়। মূল পার্থক্যটা ফুটবল এবং ক্রিকেটের। অথচ জনপ্রিয়তার নিরিখে তিন লিগের বিশ্বব্যাপী কদর কতটা, তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে কিছুটা মিলে যায় পৃথিবীর তিন প্রান্তের শীর্ষস্থানীয় লিগগুলি। কিন্তু এবার আরও একটি কারণে মিলে গেল তিন লিগ। যদিও এই মিল সুখের নয়, বরং বিষাদের গদ্য রচনা করে।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্বের তিন প্রান্তে ঘটে গেল তিন মর্মান্তিক ঘটনা। প্রথম ঘটনা লিভারপুলের বিজয়যাত্রার। সেলিব্রেশন চলাকালীন আচমকা দ্রুতগতিতে একটি গাড়ি এসে প্রায় ৫০ জনকে ধাক্কা মারে। স্বভাবতই এরপর ইপিএল চ্যাম্পিয়নদের বিজয় শোভাযাত্রা ঘিরে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আসলে বহুদিন পর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘রেডস’। শোভাযাত্রায় তাদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল আলাদা উন্মাদনা। ফুটবলার, কোচ-সহ প্রত্যেককে নিয়ে হুডখোলা বাসে চেপে শহরের রাস্তায় ঘোরার কথা ছিল ইপিএল চ্যাম্পিয়নদের। বহু মানুষ চ্যাম্পিয়ন দলকে বরণ করে নেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু তখনই বিপত্তি। পরে জানা যায়, ২৭ জনকে ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে। এরমধ্যে চার শিশুও ছিল। উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারও। তবে, পুলিশি তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গ্রেফতার হয় ৫৩ বছর বয়সি গাড়ি চালক।
এবার আসা যাক প্যারিস স্যঁ জ্যঁ-র বিজয় উদযাপনে। ইতিহাসের প্রথমবার তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। কিন্তু তাদেরও উৎসব ফিকে হয়ে যায়। প্যারিসে বিজয় শোভাযাত্রা বের করেন পিএসজি সমর্থকরা। সেখানে রাস্তায় নেমে নাচে গানে বাজনায় আনন্দোৎসবে মেতে উঠেছিলেন ক্লাব সমর্থকরা। ফলে তৈরি হয় বিশাল যানজট। গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান এক মোটরবাইক আরোহী। তাছাড়াও ভিড়ের মধ্যে ১৭ বছরের এক কিশোরকে মারা হয়। প্রাণ যায় তার। এমনকী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। পরে জানা যায়, এমন উন্মত্ত ঘটনার জেরে ৫৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও মিউনিখের স্টেডিয়ামে, যেখানে পিএসজি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে, সেখানেও খেলার পর দর্শক উন্মত্ততার ঘটনা ঘটে। পিএসজি সমর্থকরা নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে। গোটা মাঠের দখল তখন তাদেরই। তারা এতটাই উন্মত্ত ছিল যে, কেউ ছিঁড়ল ঘাস, আবার কেউ জাল নিয়ে পগারপার। কেউ আবার মাটিও খুবলে নেয়। তাদের সামাল দিতে জার্মান পুলিশ কার্যত দিশেহারা। যদিও সেদিন অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
আর সর্বশেষ মর্মান্তিক পরিণতি আইপিএল দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিজয় মিছিলে। আইপিএল শিরোপা জয়ের পরের দিন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ছিল আরসিবি বরণপর্ব। ১৮ বছরের আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বেঙ্গালুরু। আর তাই চ্যাম্পিয়ন দলকে একবার দেখবে বলে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টেডিয়ামে যখন ‘আরসিবি বন্দনা’, বাইরে তখন পদপিষ্টের ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৩-এর বেশি। ৪ জুন, বুধবার স্টেডিয়ামে ঢোকার জন্য দেওয়া হয়েছিল পাস। সকাল থেকেই জয়ী দলকে দেখবে বলে বহু সমর্থক হাজির ছিলেন। তখনই বিপত্তি। ভিড়ের মধ্যে আচমকা পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। ভাইরাল হয় কিছু ভিডিও। সেখানে দেখা যায় অ্যাম্বুল্যান্সে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অসুস্থদের। দেখা যায়, পুলিশ একজনকে কোলে নিয়ে ছুটছেন।
স্টেডিয়াম চত্বরে ছিল প্রায় পাঁচ হাজার নিরাপত্তারক্ষী। এত ভারী সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী থাকার পরেও কেন এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে, স্টেডিয়ামের বাইরে যখন স্বজনহারাদের কান্না, তখন ভিতরে আরসিবি দলের জন্য ভিক্ট্রি ল্যাপ চলছে। ক্রিকেটারদের কাছে কি কোনও খবর পৌঁছয়নি? প্রশাসনই বা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর সেলিব্রেশন জারি রাখার অনুমতি দিল কীভাবে? পরে অবশ্য প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে বিরাট কোহলি-সহ গোটা আরসিবি দল। মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। যদিও এতেও বিতর্ক থামছে না। কীভাবে প্রায় ২ লক্ষ সমর্থক ৩৩ হাজার ধারণক্ষমতা যুক্ত চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামমুখো হয়েছিলেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আসলে হাজারো প্রশ্নের ভিড়েও খেলাটাই মাঝেমাঝে রক্তাক্ত হয়। বিশ্বের যেকোনও প্রান্তেই হোক না কেন, তা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়।