সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনের তোরজোড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ভোটযুদ্ধে কি নামতে পারবে আওয়ামি লিগ? কারণ ছাত্র-জনতার ‘গণ অভ্যুত্থানে’ দেশ ছেড়েছেন দলের সভাপতি তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দলকে দ্রুত নিষিদ্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। তাঁদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বলছেন, আওয়ামি লিগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনও নির্বাচন হবে না। এই দাবিতে আজ এনসিপি ঢাকায় বড় সমাবেশও করেছে। এদিকে, যত দিন যাচ্ছে বিএনপির দ্রুত ভোটের দাবি জোরাল হচ্ছে। ফলে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে ‘নতুন’ বাংলাদেশে।
জানা গিয়েছে, আজ শুক্রবার ঢাকার গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশ করেন এনসিপির নেতারা। আওয়ামি লিগে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও প্রাক্তন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্টে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে একটি রায় দিয়েছে যে, তারা এ দেশে আর কখনও রাজনীতি করতে পারবে না। নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার, নির্বাচন ও আওয়ামি লিগের বিচার। এর কোনওটিই একে অন্যের বিরোধী নয়, বরং এ তিনটির মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক রুপান্তর হওয়া সম্ভব। নির্বাচন নিয়ে সবসময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা প্রয়োজন। তা নাহলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যে চেষ্টা তা সম্ভব হবে না। জনরোষে পড়ে আওয়ামি লিগের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপরে আওয়ামি লিগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না এ আলোচনা হতে পারে না। তারা রাজনীতির নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছে। অতএব আওয়ামি লিগের নিবন্ধন বাতিল অতি দ্রুত করা উচিত এবং তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে।
এনিয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, “গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি, এটা লজ্জাজনক। আমাদের হাই কোর্ট দেখাবেন না। হাই কোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি। এই ব্যাপারে আমরা কোনও আমলাতন্ত্রিক জটিলতা দেখতে চাই না। আগে আওয়ামি লিগের বিচার ও সংস্কারের পর নির্বাচন করতে হবে সরকারকে।” কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস জানিয়ে ছিলেন , আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা তাঁর সরকারের নেই। এরপরই নতুন করে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা, রাজশাহী-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। প্রবল বিক্ষোভ হয় চট্টগ্রামেও। পথে নামে পড়ুয়ারা। সকলের দাবি একটাই। নিষিদ্ধ করতে হবে হাসিনার দলকে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত নয়। তাই এই সরকারের বৈধতা নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কোনও অন্তর্বর্তী সরকার কি একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে? কিন্তু এখন ভোট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মূল্যবৃদ্ধি, দেশে বাড়তে থাকা অপরাধ, এরকম নানা ইস্যু নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে রয়েছেন ইউনুস। বাড়তে থাকা ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। তাই এই মুহূর্তে আওয়ামিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে কোনও বিতর্কে জড়াতে চান না ইউনুস। কিন্তু এদিকে, আওয়ামিকে ভোটে লড়তে না দেওয়া নিয়েও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ফলে আরও চাপ বাড়ছে প্রধান উপদেষ্টার উপর।