অহংয়ের খেসারত

অহংয়ের খেসারত

শিক্ষা
Spread the love


ঔদ্ধত্য মানুষকে নিঃসঙ্গ করে। ক্ষমতালিপ্সুদের আরও বেশি। কিন্তু গাড্ডায় পড়লে সেই তারাই আপস করতে বাধ্য হয়। বেঁচে থাকার জন্য, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমঝোতা ছাড়া উপায় থাকে না। সেই লক্ষ্যে সংকীর্ণ স্বার্থ থাকে বৈকি। কিন্তু আপাতভাবে ভেদ ভুলে সমন্বয় তৈরি করার হাতে-গরম নজির মহারাষ্ট্রের ঠাকরে বংশের সর্বশেষ ঘটনাবলি। বালাসাহেব ঠাকরের উত্তরাধিকারের লড়াই নিয়ে তিক্ততায় হয়তো ইতি টানতে চলেছেন উদ্ধব ও রাজ।

সম্পর্কে দুজন তুতো ভাই। কিন্তু ঔদ্ধত্য, ক্ষমতালিপ্সার কঠিন পাথরে দুজন হয়ে উঠেছিলেন পরস্পরের জাতশত্রু। শিবসেনা ভেঙে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা তৈরি করেছিলেন বালাসাহেবের ভাইপো রাজ। উদ্ধবের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত রেষারেষি মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার সমীকরণে নানাভাবে প্রভাব ফেলেছে। দুজন ক্ষমতার করিডরে দুই বিপরীত দিকে হেঁটেছেন বরাবর। বালাসাহেব-পুত্র উদ্ধব সেই কাজে ব্যবহার করে শিবসেনাকে। রাজ কাজে লাগিয়েছেন তাঁর মহারাষ্ট্র মহানির্মাণ সেনাকে।

কালের স্রোতে জনতার দরবারে দুজনই এখন কোণঠাসা। বালাসাহেব বেঁচে থাকতে কংগ্রেস ছিল শিবসেনার ঘোর শত্রু। কিন্তু মহারাষ্ট্রের শাসন নিজের হাতে নেওয়ার ব্যক্তিস্বার্থে উদ্ধব জোট গড়েছিলেন কংগ্রেস এবং কংগ্রেস ত্যাগী শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে। এই নীতিহীনতার খেসারত দিতে হয় শিবসেনাকে। শাসনদণ্ড হাতে নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ভাঙন ধরে শিবসেনায়। অধিকাংশ বিধায়ক, সাংসদকে নিয়ে শিবসেনা নামে আরেকটি দল গড়ে ফেলেন একনাথ শিন্ডে।

দলের মধ্যে সেই টানাপোড়েনের খেসারত হিসেবে মহারাষ্ট্রে পতন ঘটেছিল উদ্ধব মন্ত্রীসভার। আলাদা দল গড়ে রাজ ঠাকরেও মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার করিডরে তেমন কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। বরং বালাসাহেবের হিন্দুত্বের ভাবনাকে উসকে মহারাষ্ট্রে রাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। শিবসেনার প্রাণপুরুষের মূল মতাদর্শের জায়গাটা ছিনতাই করে নিয়েছে বিজেপি। সেই বাস্তবের মোকাবিলায় উদ্ধব ও রাজরা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প তৈরি করতে চরম ব্যর্থ হয়েছেন।

অস্তিত্বের এই সংকটে মারাঠা অস্মিতাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন দুজনে। দুই ভাইয়ের ক্ষমতালিপ্সা চরিতার্থ করতে অন্য বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু এককভাবে মারাঠা অস্মিতাকে উসকে লাভ তেমন নাও হতে পারে বুঝে দীর্ঘদিন পর হাত ধরতে চলেছেন দুই ভাই। মহারাষ্ট্রে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, রাজের দলের সঙ্গে হাত মেলাতে শিব সৈনিকদের আপত্তি নেই বলে উদ্ধব নিজে মন্তব্য করায়।

উভয় দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের মনের তাগিদও সে রকমই। ফলে একসময় যে অহং দুই ভাইয়ের সাপে-নেউলে সম্পর্কের কারণ ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে ক্ষমতা অনেক দূরে বুঝতে পেরে। ফের এক ছাদের তলায় সংসার পেতে অন্তত ভাগাভাগি করে হলেও ক্ষমতার স্বাদ নিতে মরিয়া তাঁরা। ক্ষমতার ইতিহাসে ঔদ্ধত্যের কারণে পতনের পরিণামের উদাহরণ অনেক। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমরা ২৩৫ আস্ফালন অনেকের স্মরণে আছে।

সেই ঔদ্ধত্য বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের সংক্রামিত করেছিল। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ সেই ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছিল বামফ্রন্টকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। সিপিএম এখনও সেই অন্যায়ের খেসারত দিয়ে যাচ্ছে। সংসদীয় রাজনীতির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে শূন্যে ঠাঁই হয়েছে দলটির। আইএসএফ, কংগ্রেসের হাত ধরে সিপিএমের সেই সংকট মুক্তির চেষ্টা এখনও সফল হয়নি।

উদ্ধব-রাজের যুগলবন্দিও মহারাষ্ট্রে দাগ কাটতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এখন একই রোগে আক্রান্ত। ঔদ্ধত্যের হাত ধরে বাংলা এখন সংক্রামিত শাসকের দুর্নীতি রোগে। বিরোধীরা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প তৈরি করতে পারছে না বলে তৃণমূল বহাল তবিয়তে শাসন করে চলেছে শুধু। ঔদ্ধত্যের খেসারত যে দিতে হয়, তা ইতিহাসের শিক্ষা। সিপিএম, কংগ্রেসের উদাহরণ সামনে রাখলে তা বোঝা যায়। উদ্ধব-রাজরাও আরেকবার সেটা বুঝিয়ে দিতে চলেছেন হয়তো।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *