অসুর চিনে নিধনের শিক্ষাটা জরুরি

অসুর চিনে নিধনের শিক্ষাটা জরুরি

ব্লগ/BLOG
Spread the love


 

  • মৈনাক ভট্টাচার্য

ভরকেন্দ্রে আঘাত হলে অনুরণন প্রত্যন্ত প্রান্ত পর্যন্ত  ছড়িয়ে যায়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতের কলকাতায় ভয়ংকর বৃষ্টির তাণ্ডব এই বাংলার হিমালয় পাদদেশী আমাদেরও পুজোর আবহের মধ্যে তাই এক নতুন অসুর-ভয়। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের ব্যাকরণে এই অসুরের নাম  কিউমুলোনিম্বাস মেঘ। এই মেঘের চকিত দাপট, কীভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্রিটিশদের হাতে গড়া এক পরিকল্পিত শহর কাঠামোকে ছারখার করে দিল, সেটা এখনও আলোচ্য। কলকাতার মতো শক্তিধর শহরের এই বিপর্যয়ে আমাদের মনের সিঁদুরে মেঘ প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে, এমন হলে উত্তরবঙ্গের শহরগুলির কী হবে? শিলিগুড়ির জনসংখ্যা থেকে শহরের পরিধি যেভাবে প্রতিদিন বাড়ছে, সেভাবে  চাপ নেওয়ার কোনও পরিকল্পিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না আপাত অভিভাবকহীন এই শহরটা। ইদানীং তাই শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন জায়গায় সাময়িক জল দাঁড়িয়ে পড়ে। শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা সেই পুরোনো ধারায়। বেনিয়মের ফ্ল্যাট সংস্কৃতির আধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে শহরের ক্যাচমেন্ট এরিয়া থেকে ফুটপাথ। যার কারণেই এই আপাত জল-যন্ত্রণা।

এখনও এই শহরে হঠাৎ বৃষ্টির জল দ্রুত সরিয়ে ফেলবার জন্য কোনও পাম্পিং স্টেশন তৈরি কিংবা ড্রেনের ঢাল ঠিক করবার কোনও মাস্টার প্ল্যান নেই। এই বিপর্যয়ের বারিধারা আমাদের শহরে ভেঙে পড়তেই পারে। কিউমুলোনিম্বাস তো আর নগর মহানগর বোঝে না, রাজনৈতিক বিভেদও বোঝে না। বোঝে আবহাওয়ার পরিবর্তিত সময়। যে কোনও জায়গায় ঊর্ধ্বমুখী বায়ুস্রোত থেকে এই মেঘ তৈরি হতে পারে।

আমরা উত্তরবঙ্গবাসীরা আজও এখানকার প্রকৃতির মতোই নম্র শুভ্র। বঞ্চনার সবটাকেই অদৃষ্ট বলে মেনে নিই। আমাদের মিডিয়া আছে, জনপ্রতিনিধি আছে তবু আমরা অন্যায় অবিচার দেখেও সাত চড়ে রা কাড়তে বা অধিকার বুঝে নিতে শিখলাম না। তাই আমাদের কান্ট্রি প্ল্যানিং হয় না, মেট্রো হয় না। মালদা, বালুরঘাট, ডুয়ার্স কিংবা পাহাড় সহ উত্তরবঙ্গ কীভাবে বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে আপৎকালীন যোগাযোগ করবে এসব ভাবনা তো অনেক দূরের, রাজধানী বা গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি থেকে রাতের ট্রেন এসে পৌঁছানোর পর পাশের শহর জলপাইগুড়ির জন্য সরকারি বা বেসরকারি কোনও পকেট সাশ্রয়ী কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি পরিকল্পনাই হয় না।

উত্তরের গ্রাম শহরের রাস্তাঘাটে প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা  টোটোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখনও কোনও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি তৈরি করে উঠতে পারিনি আমরা। বোঝার উপর শাকের আঁটি, শহর শিলিগুড়ি ভূতল বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কারণে রাস্তাঘাটের যে খননের পর আবার সেটা আগের মতো কমফোর্ট জোনে ফিরিয়ে আনার দায়বদ্ধতা, নির্মাণ সংস্থা পালন না করায় বিপর্যয়ে ব্যক্তিগত বিতৃষ্ণাটুকু ছাড়া আর কিছুই আমাদের প্রতিবাদের প্রতিশব্দ হয়ে ওঠে না।

রোগ লুকালে রোগ সারে না, রোগ যে বাড়ে এই ধ্রুব সত্য বোঝার এবং বোঝানোর দায় কিন্তু আমার আপনার সবার। না হলে এভাবেই প্রতিবার দুর্গা আসবে চলে যাবে, অসুর বধের রূপককে লোকাচার বলে হইহই করে আমরা কাটিয়ে দেব, কোনটা আসল অসুর, কীভাবে নিধন করব উৎসবের আড়ালে এই লোকশিক্ষা চাপা পড়েই থাকবে।

(লেখক ভাস্কর এবং সাহিত্যিক শিলিগুড়ির বাসিন্দা)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *