অসুরদলনী দেবী মহিষাসুরমর্দিনী! দুর্গা নাম যুক্ত হল কী করে?

অসুরদলনী দেবী মহিষাসুরমর্দিনী! দুর্গা নাম যুক্ত হল কী করে?

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেবী দুর্গা। ঘরের মেয়ে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। বছর শেষে মা আসেন বাপের বাড়ি। ষষ্ঠী থেকে হিসাব করলে দিন পাঁচেক কাটিয়ে ফেরেন কৌলাস। কিন্তু তিনি কি শিবানী? গোটা চণ্ডীতে কোথাও দেবী মহামায়াকে শিবজায়া বলা হয়নি। তাঁকে মহাদেবের পত্নী হিসাবে ভাবতে গেলে অন্যভাবে বুঝতে হবে। সে অন্য কথা। তাহলে কে দুর্গা? তাঁর আবির্ভাব হল কেন?

শুরুতে একটি শ্লোকের উল্লেখ করা দরকার। ‘ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি।। তদা তদা বতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্‌।।’ (শ্রীশ্রীচণ্ডী একাদশ অধ্যায়)। অর্থাৎ যখনই এই প্রকার দানবগণের প্রাদুর্ভাববশত বিঘ্ন উপস্থিত হবে, তখনই আমি আবির্ভূতা হয়ে দেব-শত্রু অসুরগণের বিনাশ করব। মহিষাসুর বধের পর দেবী বলছেন এ কথা।

Durga Puja 2025: History of the name Durga

মনে পড়ে, বিষ্ণু গীতায় বলেছেন, “যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥ পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥” তাহলে তিনি মহিষাসুরকে বধ করতে নতুন অবতারে এলেন না কেন? ধরে নেওয়া যাক ব্রহ্মার বরে কোনও পুরুষশক্তি মহিষাসুরকে বধ করতে পারতেন না। ভালো কথা। কিন্তু নারায়ণ অন্য কোনও রূপ তো ধারণ করতেই পারতেন। যেমনটা করেছিলেন ভক্ত প্রহ্লাদকে বাঁচাতে। মহিষাসুর বধে নারীশক্তিরই প্রয়োজন হল কেন?

এখানেই আসে ‘ওম্যান এমপাওয়ারমেন্টে’র বিষয়। মহিষাসুর ভাবতেই পারেননি কোনও নারী তাঁকে বধ করতে পারেন। নারী মাত্রই যেন ঘরের কাজে ব্যস্ত ও ভোগ্যপণ্য! অসুরগণ কালে কালে তেমনটাই ভাবতেন। সে কথা চণ্ডীতে শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধে রয়েছে। রূপে মোহিত হয়ে দু’ভাই দেবীকে স্ত্রী হিসাবে চাইলেন। মহামায়া শর্ত দিলেন, তিনি দুই ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত হলে, তবেই তা সম্ভব। পরের ঘটনা সকলেরই জানা। সবাই জানেন দেবী কীভাবে বধ করলেন তাঁদের অহংকারকে।

ঠিক তেমনভাবেই মহিষাসুরের সময় দেবতারা যখন ভাবছেন কীভাবে তাঁর বিনাশ করা যায়। তখনই দরকার ছিল এমন এক নারীশক্তির, যিনি বিনাশ করবেন মহিষাসুরের। হয়ে উঠবেন জগজ্জননী। কিন্তু ইন্দ্রাণী, শিবানী, বা ব্রাহ্মণী দিয়ে এই কাজ হবে না। অতএব দেবতাদের দ্বারা সৃষ্টি হলেন দেবী।

Durga Puja 2025: History of the name Durga

শাস্ত্রে পাওয়া যায় অন্য মন্বন্তরে দুর্গ বা দুর্গম নামে এক দৈত্যের বিনাশ করেছিলেন দেবী। তিনি মহামায়ার ‘দ্যুতি’ মাত্র। দেবী সেই সময় কালরাত্রির প্রতীক। মা কৌশিকী। তাঁকে বধ করলেন দেবী। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দুর্গা নামের কী সম্পর্ক। এক কথায় বললে দুর্গ বলতে যা কিছু  অশুভ তাকে বোঝায়। ‘আ’ কার বিনাশের অর্থ বহন করে। দৈত্য দুর্গমের বিনাশের মধ্যেই দেবীর সঙ্গে জুড়ে যায় দুর্গা নাম। অতএব মহিষাসুরকে যিনি বধ করছেন তিনি দুর্গা। দানবদলনী হয়ে যেই তিনি দেবতাদের বিপদমুক্ত করলেন, তাঁর তখন নাম হল মহিষাসুরমর্দিনী! এদিকে মহিষাসুরকে বধের পর শুধু অসুর বা অশুভ শক্তির বিনাশই হয়নি। জগৎকুলে আমিত্ব-অহং বোধের বিনাশ হয়েছে। বিশ্বে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নারীর ক্ষমতা। যেখানে দুর্গা হয়ে উঠলেন এক ‘প্যাটার্ন’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ







Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *