অরণ্যের গভীরে

অরণ্যের গভীরে

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


সাড়ুনদী ঘেঁষে জঙ্গলের মাঝ বরাবর একটা ব্রিজ চলে গেছে। আগে কাঠের িব্রজ ছিল, বর্তমানে পাকা রাস্তা, সোলার িস্ট্রট লাইট। আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে সাড়ুঘাটি। িব্রজের এপারে বহু বছর ধরে দু’-তিনটে চায়ের দোকান ছিল। শালবনের ধার বরাবর। শহরের মানুষ এসে অক্সিজেন নিয়ে ফিরে যেত এখান থেকে। শহরের বেশিরভাগ গাছ হাইওয়ে লেনের জন্য যখন কাটা পড়ছে, তখন এই সাড়ুঘাটিই শহরের একদম কাছাকাছি একমাত্র সবুজের আশ্রয়। কিন্তু সরকার এখানেও একটা ইকো পার্ক বানাতে চাইছে। এত মানুষের সমাগম হয় এখানে। পার্ক বানিয়ে দিলে সরকারের ঘরেও লক্ষ্মীলাভ হবে এই আশায় বন বিভাগের নির্দেশে একে একে সমস্ত দোকান উঠিয়ে দিয়েছে বন বিভাগের লোকেরা।

গেঁাসাইয়ের চায়ের দোকানটাও নেই আর। কীর্তন চাচাও আর গান গাইতে গাইতে দোকানদারি করে না। এই জায়গার প্রাণ ছিল গোঁসাইয়ের চায়ের দোকান। ওখানে বসেই আড্ডা চলত সবার। আট থেকে আশি। ভোর থেকে সন্ধে। লোকের আনাগোনা লেগেই থাকে। শহরের গুমোট থেকে পালিয়ে আসার এই একমাত্র জায়গা এই সাড়ুনদীর পাড়। এই বৈকুণ্ঠধাম। নিবিড় অরণ্য। মনের কথা বলার, শোনার একটা কান।

সেই নিরিবিলি শালবন, সেই সবুজ অরণ্যের প্রবেশপথ এখন রঙিন পতাকায় মোড়া। বাঁশ দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়েছে চতুর্দিক। নদীর পাড় থেকে শুরু করে পুরো অংশটাই বনবিভাগ ঘিরে ফেলেছে। এতে নদীটা হয়তো রেহাই পাবে কিছুটা। আবর্জনার হাত থেকে বাঁচবে। কিন্তু মানুষগুলো বাঁচবে কি? যারা নিত্যদিন বেঁচে থাকার জন্য এই জায়গার উপরে নির্ভরশীল ছিল। এই সমস্ত কথাই গুলশানের মাথায় ঘুরছে দিনরাত। যেদিন থেকে ও জানতে পেরেছে আর কিছুদিনেই পার্কে বদলে যাবে এই অরণ্য আশ্রম। রাতারাতি একটা নির্জন জায়গা কেমন ইকো পিকনিক স্পটে বদলে গেল। বাঁশ দিয়ে সাময়িক গেট বানানো হয়েছে। কাঠ দিয়ে টিকিটঘর বানানো হয়েছে। ব্যানারে লেখা হয়েছে সাড়ুঘাটি ইকো পিকনিক স্পট। ব্রিজের ওপারেই নেপালি বস্তি। বিনয়গুড়ির আওতায় পড়ে এই জায়গা। শিলিগুড়ির পার্শ্ববর্তী হলেও জলপাইগুড়ির অন্তর্ভুক্ত এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

নেপালি বস্তির ভেতরে একটি ছোট বুদ্ধ মন্দিরও আছে। প্রার্থনা পতাকায় মোড়া মন্দিরের আশপাশ। ছোট ছোট দোকানও রয়েছে রাস্তার ধারে। ব্রিজের ওপার থেকে শুরু করে ক্রমশ গভীর জঙ্গলের দিকে চলে গিয়েছে এই নেপালি জনবস্তি। দু’-একটা রিসর্ট খুলেছে এসব অঞ্চলে। নেতাগোছের মানুষ, ব্যবসায়ী কিংবা প্রেমিক যুগলদের যাতায়াত লেগেই থাকে এই রিসর্টগুলোতে। পরিবার নিয়েও যায় কেউ কেউ।

গুলশান সকাল থেকেই ভীষণ অস্থির হয়ে আছে। কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এত প্রাণের জায়গা এভাবে পার্ক হয়ে যাচ্ছে। গোঁসাইয়ের কথা ভেবে চোখে জল আসছে বারবার। বিনীতও গুলশানের মতোই দুশ্চিন্তায়। গুলশান আর বিনীত থাপা দুই বন্ধু। গুলশান থাকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে। ঘিঞ্জি ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলের ভেতরে। মসজিদ লাগোয়া একটা দোকান আছে ওর চাচার। বহু পুরোনো দোকান৷ মাঝে মাঝে গুলশান নিজেও বসে দোকানে। ইসলামিক বইপত্র পাওয়া যায়। আধুনিক শহরের ঝাঁ চকচকে দোকানের আলোর কাছে অনেকটাই ম্লান আর অন্ধকার গলির মতো গুলশানের বাপঠাকুরদার এই দোকান। এই সমস্ত পুরোনো ঐতিহ্যের ইতিহাস বহনকারী দোকানগুলোও তো জঙ্গলের মতোই ফুরিয়ে আসছে। হয় কেটে ফেলা হচ্ছে। নয়তো দখল হয়ে যাচ্ছে।

গুলশানের কলেজ শেষ হয়েছে গতবছর। এখন হোম টিউশন করায়। ধর্মের প্রতি আগ্রহ একেবারেই নেই। কোনও ধর্মের প্রতিই ওর কোনও আগ্রহ নেই। অথচ কোরান,  বাইবেল, গীতা সমস্ত বই ওর সংগ্রহে আছে। যদিও অন্যের ধর্মভাবনার প্রতি ওর শ্রদ্ধা আছে। প্রকৃতিই ওর একমাত্র উপাসনা। বিনীত থাপা গুলশানের বন্ধু। নেপালি বস্তিতেই থাকে৷ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। যে রাস্তাটা রামকৃষ্ণ আশ্রমের দিকে চলে গেছে সেই রাস্তার পাশেই ওর ছোট্ট কাঠের ঘর। ফুলের বাগানে ঘেরা। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। বিনীত আর বিনীতের বড়দা মিলে দোকানটা চালায়। যদিও বিনীত বেশিরভাগ সময়েই গুলশানের সঙ্গে টইটই করে বেড়ায় বনবাদাড়ে।

শিলিগুড়ির আধুনিকতার ছাপ এখনও পড়েনি এই জায়গায়। দুই বন্ধুর বেশিরভাগ সময়ই কাটে এই বৈকুণ্ঠধাম অরণ্য ঘেঁষা অঞ্চলে। খালাচাঁদ ফাপড়ির রাস্তাঘাটে। এই সব অঞ্চলের বুনোগন্ধ লেগে থাকে দুজনের জামায়, আস্তিনে, গল্পে, জীবনে। অরণ্যের ভেতরে ঢুকে পড়ার নেশায় দুজনে বুঁদ হয়ে থাকে সারাদিন। দুজনকেই প্রায় জঙ্গলের ভেতরে কিংবা বন বিভাগের চলাফেরার রাস্তায়, বনের ভিতরের তিন নম্বর কাঠের িব্রজের নীচে নদীর সাদাবালুর চরে দেখা যায়। জঙ্গলের মানুষদের সঙ্গে গুলশানের খুব ভাব। সকলেই চেনে গুলশানকে। বিনীত তুলনামূলক কম কথা বলা ছেলে। ভালো নেপালি ফোক গান গায়। ওর আদি বাড়ি কালিম্পং।

বিনীত নিজে নেপালি বস্তিতে থাকার সুবাদে এই অঞ্চলের জীবন প্রণালী সম্পর্কে ভালো করেই ওয়াকিবহাল। গুলশান বাইরের ছেলে হয়েও বনের নিয়ম, বনের যাপনে রপ্ত হয়ে গেছে। এখন বৈকুণ্ঠধাম অরণ্যই ওর দ্বিতীয় ঘর। এখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করে গুলশানের। কাঠকুড়ানি দিদিদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। জঙ্গলে কারা কাঠ চুরি করতে যায় সে খবরও আছে গুলশানের কাছে। জঙ্গলের জীবন বড় অভাবের। কাঠচুরির পরিবর্তে আর অন্য কাজে টাকা কই? সে কথাই শোনা যায় কান পাতলে।

বন বিভাগের বাবুরা যে কিছুই জানে না তাও না। কারা করে কীভাবে করে সেখবরও আছে। উপর থেকে চাপ পড়লে তুলে নিয়ে যায় প্রায়। কিছুদিন পরে ছেড়ে দিলেও সেই একই কাজে ঢুকে পড়ে এরা। জঙ্গলের জমিও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে লুকিয়ে বেআইনিভাবে। বিনীত জানে। ও নিজেও জমি মাফিয়াদের খপ্পরে পড়েছিল একসময়। স্থানীয় নেতাদের মদতপুষ্ট এই চক্র। গুলশান এই সমাজের ভেতরে ঘুরতে থাকে রোজ। জঙ্গলের নীরবতা ওকে টানে। যে রাস্তাটা বনদুর্গার মন্দিরের দিকে চলে গেছে তার উলটোদিকে আরও একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা গভীর জঙ্গলের দিকে চলে গেছে। গুলশান যখনই এই রাস্তার দিকে তাকায় অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিনীত পিছু ডাকলে সংবিৎ ফিরে পায়। এ রাস্তায় মানুষের চলাচল নেই। বস্তির প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এই রাস্তা সোজা নরকে চলে গেছে। বন্যপ্রাণীদেরও নাকি দেখা যায় না জঙ্গলের এই পরিসরে। গুলশান কী দেখতে পায় তা ওই জানে। শহরের ভিড়, সম্পর্কের জটিল রাস্তাগুলোর থেকে এই পথটাই হয়তো একটা অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যেতে পারে ওকে। বিনীত গুলশানকে টেনে নিয়ে যায় খালাচাঁদ ফাপড়িতে। আজ ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে মাঠে। ওরা আজ ওখানেই পুরোদিন খেলা দেখে রাতে বস্তির গুমটি দোকানে কিছু খেয়ে বাড়ি ফিরবে।

বন বিভাগ থেকে একটি সার্কুলার জারি হয়েছে। তাতে সাড়ুঘাটি ও বিনয়গুড়ির মানুষেরা এই পার্কে কাজের জন্য আবেদন করতে পারবে। কিন্তু এই পার্ক সাড়ুঘাটির অন্তর্গত এলাকায়। স্থানীয় বিরোধী দলের লোকাল কমিটির নেতা কল্যাণ বর্মন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই পার্কে শুধুমাত্র সাড়ুঘাটি অঞ্চলের লোকেরাই কাজ করবে। আর যারা দীর্ঘদিন এই জায়গায় গুমটি দোকান করে সামান্য করে খাচ্ছিল তাদের অধিকার, ফিরিয়ে দিতে হবে। সাড়ুঘাটি রেঞ্জের বড়বাবু বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে। গুলশান স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে এটুকু বুঝতে পেরেছে মানুষ উন্নয়ন চায়। কিন্তু নিজের অধিকার, মাটি, অন্নের বিনিময়ে কখনোই নয়। কল্যাণ বর্মনের সমস্ত দাবিও যে খুব ন্যায়সংগত তাও মনে করে না গুলশান আর বিনীত। সরকার বন বিভাগের জমিতে ইকো পার্ক করবে এটাও ততটাই স্বাভাবিক। এতে স্থানীয় মানুষেরই উপকার হতে পারে।

গুলশান গোঁসাইয়ের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতে দিতে বিনীতকে বলেছিল একদিন, দেখবি এই প্রকৃতির এই ভার্জিন রূপটা বেশিদিন থাকবে না এখানে। আজনয় কাল এখানে কিছু হয়েই যাবে। মানবসভ্যতা যত এগোয় জঙ্গল ততই পিছিয়ে যায় শুধু। আর বন্যপ্রাণের একটা মরণবাঁচন লড়াইয়ের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। গৃহহীন পাখিরা দলে দলে পাগল হয়ে যায়। মানুষ গাছকে ভালোবাসার পরিবর্তে শুধুই শুকনো কাঠ ভাবতে শুরু করেছে৷ এখন জঙ্গলের ভেতরে শুধু অদৃশ্য আগুন। জ্বলন্ত ছাই। যে ছাই থেকে যে কোনওদিন শহরের নিয়মকানুনকে জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো আগুন জ্বলে উঠতে পারে।

সুরজের বাজের বাড়িতে হাঁড়িয়া বিক্রি হয়। একথা অনেক বছর আগে বিনীতই জানিয়েছিল গুলশানকে। জঙ্গলের অনেকটাই ভেতরে সুরজের বাজের বাড়ি। নেপালি ভাষায় দাদুকে বাজে বলে। গুলশানের নেপালি ভাষায় এখনও দখল হয়নি। ভাঙা ভাঙা নেপালি বলে নিতে পারে। গুলশান সুরজ বাজেকে ভীষণ পছন্দ করে। বিনীত যদিও এখানে আসে একটাই কারণে। সুরজ বাজের মেয়ের হাতের ফাক্সা খেতে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যায় বাড়ির কাউকে না কাউকে। বেআইনিভাবে মদের ব্যবসা করতে গিয়ে যত বিপত্তি বাধে। পুলিশ তো পুলিশের নিয়মেই চলবে। কাজও হবে। দুটো পয়সাও খাবে। এবারও দশ হাজার টাকার জরিমানা দিয়ে তবেই পুলিশ ছেড়েছে। সুরজ বাজে এতক্ষণ এই গল্পই শোনাচ্ছিল বিনীত আর গুলশানকে। সুরজ বাজে কথা বলতে ভালোবাসে। সারাদিনে যে ক’জন খদ্দের আসে তাদের সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন গল্প করে। দীর্ঘশ্বাস যেন তার কপাল থেকে নেমে পাশে এসে বসে। আর মুখোমুখি কথা শোনে। সুরজ বাজে বলে হাঁড়িয়া তৈরি এবং বিক্রি তো অপরাধ নয়৷ বংশপরম্পরায় হাঁড়িয়া বিক্রি করে চলেছে তাদের পরিবার। এমনিতেই খদ্দেরের অভাব, তার ওপরে পুলিশ এসে মাঝেমধ্যেই তুলে নিয়ে যায় খদ্দেরদেরও। সুরজ বাজের চোখের কোনায় জল। যেন ঘন সবুজ অরণ্যের ওপর বৃষ্টি ফোঁটা এসে পড়ছে। কীভাবে চলবে আমাদের। গল্পে গল্পে হাঁড়িয়ার গ্লাস আবার ফাঁকা হয়ে এল দুজনের।

সুরজ বাজের ছোট মুদির দোকানের আড়ালে যে ঘর থেকে হাঁড়িয়া পাওয়া যায় তার ঠিক উলটোদিকেই ওই বিশালাকার জঙ্গল। যে রাস্তাটা আদিম কুমিরের মতো হাঁ করে ছিল, সেই রাস্তার কথাই মনে পড়ে গুলশানের। একটা অনন্ত পথ। যার শেষ নেই। শূন্যের ওপারেও অজানা পরিপূর্ণতা। বিনীত আরও এক বোতল হাড়িয়া নেয়। দু’পাতা জলজিরা। গুলশান হাড়িয়াতে চুমুক দিতে দিতে বিনীতকে বলে জঙ্গলের সব জমি চুরি হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।  আর এখানে যারা বন্যপ্রাণের সঙ্গে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এত দিন জীবন অতিবাহিত করলো তাদের ধীরে ধীরে আরও গভীর জঙ্গলের দিকে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। মানুষ আর জংলি পশুর মধ্যে আর কোনও তফাত রইল না। বিনীত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে জানি না কতদিন আর এভাবে লড়াই করে টিকে থাকতে পারব এই মাটিতে। সরকার নয়তো জমি মাফিয়া, কাঠ চোর, পশু চোরাচালানকারী, দালালদের হাত থেকে রক্ষা পাব কি না সত্যি জানি না।

সুরজ বাজের মেয়ে দূর থেকে চুপ করে শোনে ওদের কথা৷ গুলশানকে মনে মনে ভালোবাসে সুরজ বাজের মেয়ে। বয়সে গুলশানের চেয়ে বড়ই হবে। গুলশানের শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা উপেক্ষা করতে পারে না সে। ছেলেটা বড় অদ্ভূত।  যতটা ভরাট ততটাই খালি মনে হয় ভেতর থেকে। তবু কাইরার ইচ্ছে করে গুলশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। হাঁড়িয়ার গ্লাসগুলো তুলে নিয়ে যায় নিজেই। আবার ফিরে আসে। গুলশানের দিকে তাকিয়েও বিনীতকে লক্ষ করে বলে তোমরা এভাবে জঙ্গলের ভেতরে ঘুরে বেড়িও না। এমনিতেও তোমাদের মুখের ওপর স্পষ্ট কথা বলার অভ্যাস৷ এই এলাকায় অনেক মাতব্বর আছে। যারা আরও ক্ষমতাধর মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে। এখানেও আমাদের প্রতিদিন নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কেউ শোনে না আমাদের কথা। প্রান্তিক মানুষদের কথা শোনার সময় নেই উঁচুপদের বাবুদের কাছে। আমরা জঙ্গলের মানুষ। তোমরা কেন নিজের বিপদ ডেকে আনছ এভাবে?

গুলশান অন্যমনস্ক অবস্থায় অর্ধেক কথা শোনে আর অর্ধেক মন ওর সেই বনের ভেতরের রাস্তায় চলে যেতে চায়। কিন্তু আজও ওই পথে ওর যাওয়া হয়নি। বহুবার তো এই জঙ্গলের বিভিন্ন রাস্তায় দুজনেই ঘুরে বেরিয়েছে। যেখানে মানা সেসব পথেও বাইক ছুটিয়ে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এই পথে যাওয়া নিষেধ। নিষেধ শুধু বন দপ্তরের তরফ থেকেই না, নিষেধ স্থানীয় জনপদের মানুষেরও। সরকারিভাবে তো সমস্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলেই প্রবেশ নিষেধ থাকে। গুলশান আজও কেন যায়নি সে পথে নিজেও জানে না৷ যেতে যে চায় না এমনও না। পাখির ডাকহীন একটা গভীর অরণ্য। সূর্যের আলো কম। হাঁড়িয়ার ঘোর লেগে গেছে গুলশানের। আম্মির কথা মনে পড়ছে। আম্মিরা গাছের মতোই হয়। অরণ্যের মতো হয়। কাছে ডাকে। ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সাড়ুঘাটি পার্কের আজ উদ্বোধন। দূর দূর থেকে মানুষ এসেছে পিকনিক করতে। শীতের কুয়াশার ভেতর দিয়ে জঙ্গলের রহস্য ভেদ করে দুটো বাইক ছুটছে। হাঁড়িয়ার নেশা আরও জোরে ছুটছে সবুজ জঙ্গলের পাথুরে রাস্তায়। বিকেল থেকে সন্ধের অন্ধকার হয়ে আসছে। আর গুলশান ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে কুয়াশাজড়ানো সেই আদিম সবুজ গুহার ভেতর। বিনীত তখনও অনেকটা পিছনে। সুরজ বাজের বাড়ির উঠোনে কাইরা একা বসে আছে। হাঁড়িয়ার ফোঁটায় মাছি এসে বসছে বারবার। বাইরে পুলিশ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *