সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিয়ে জীবনের এক আনন্দময় মুহূর্ত। জীবনসঙ্গীকে চিরকালের মতো কাছে পাওয়া, সে কী কম প্রাপ্তি? মোটেই নয়। তাই এই দুর্লভ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজন করেন নানা জন। তবে মহারাষ্ট্রের শ্রীকান্ত একুড়ে যা করলেন, তা একেবারেই ব্যতিক্রম। সর্বোপরি, তা নিজের বা নববধূর জন্য নয়, গ্রামবাসীদের সুবিধায় বড় একটা কাজ করে দিলেন বর। বাড়ি থেকে চাষের খেতে যাওয়ার জন্য ঝাঁ চকচকে রাস্তা বানিয়ে দিলেন তিনি! শ্রীকান্তর কাজের তালিকায় আরও আছে। পরিবেশ সবুজ রাখতে গ্রামের চারপাশে ৯০টি চারাগাছ রোপন করেছেন। সবমিলিয়ে এক অভিনব বিবাহ অনুষ্ঠানের সাক্ষী মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরের সুসা গ্রামের বাসিন্দারা।
শ্রীকান্ত আকুড়ে কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। তাই সবুজ পরিবেশ, খেতখামার, কৃষিকাজ নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং সচেতন। সেই সচেতন মন থেকেই নিজের বিয়েতে একটু অন্যরকম ভেবেছেন। গত ২৮ এপ্রিল অঞ্জলিকে বিয়ে করেছেন শ্রীকান্ত। তাঁর আদর্শ সমাজ সংস্কারক জ্যোতিরাও ফুলে। তাঁর কীর্তি সামনে রেখে শ্রীকান্ত জনগণের জন্য কাজ করতে চেয়েছেন। আত্মীয়দের কাছ থেকে কোনও উপহার নেননি। বদলে গ্রহণ করেছেন গাছের চারা। সেসবই গ্রামের চারপাশে পুঁতেছেন শ্রীকান্ত। জাঁকজমক করে বিয়ের খরচের অর্থ তিনি সেই কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামবাসীদের জন্য বানিয়ে দিয়েছেন রাস্তা। এখন আর তাঁদের চাষের খেতে যেতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। শ্রীকান্তর এমন কাজ তো সমাজ সংস্কারেরই শামিল! ধন্য ধন্য করছেন সকলে।
এভাবে বিয়ের পরিকল্পনা অবশ্য আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন শ্রীকান্ত। এমন ব্যতিক্রমী বিয়েতে প্রথমে মোটেই রাজি ছিল না পরিবার। কিন্তু বুঝিয়েসুঝিয়ে তাঁদের সকলকে রাজি করিয়েছেন যুবক। রাস্তার জন্য যে খরচ, বিয়েতে উপহার স্বরূপ সেই অর্থ সকলের থেকে নিয়েছেন তিনি। ঝুলিতে এসেছে ৫০ হাজার টাকা। তাতেই তৈরি হয়েছে ৬০০ মিটার পথ। এখন বাড়ি থেকে খেতে যেতে আর ভাঙাচোরা রাস্তা পেরতে হয় না। মসৃণ পথ ধরে চাষ করতে যেতে পারেন গ্রামের মানুষজন।
শ্রীকান্তর মন্তব্য, ”বর্ষাকালে রাস্তাঘাট খুব খারাপ হয়ে যায় এখানে। খেতে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে ওঠে। আমরা পঞ্চায়েতের সাহায্যে তাই পাকা রাস্তা তৈরি করেছি। লোকে তো বিয়েতে বাসনপত্র, আসবাব এসব উপহার দেয়। আমি সেই অর্থই সরাসরি আমাকে দিতে বলেছি। এভাবে তহবিল তৈরি করে সুসা গ্রামে গাছও পুঁতেছি। এখানে মোট ৩৬ রকমের গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। সবই ফলের গাছ। অর্থাৎ কয়েকদিন পর গাছের ফলও পাবেন সকলে। এ কি কম আনন্দের?”