সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুবভারতীতে জ্বলল মশাল। ডুরান্ড কাপের ডার্বির রং লাল-হলুদ। ২-১ গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে চলে গেল লাল-হলুদ শিবির। খেলার প্রথমার্ধে কার্যত একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ইস্টবেঙ্গলের। দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সময় মোহনবাগান লড়াই করলেও সার্বিকভাবে যোগ্য দল হিসাবেই ডার্বিতে বাজিমাত করলেন অস্কার ব্রুজোর ফুটবলাররা। জোড়া গোলে ডার্বির নায়ক দিয়ামান্তাকোস। কোন ম্যাজিকে বাজিমাত করল লাল-হলুদ শিবির? কেনই বা হারল মোহনবাগান? রইল পাঁচ কারণ।
অপ্রস্তুত মোহনবাগান: ইস্টবেঙ্গলের থেকে ৭-৮ দিন কম অনুশীলন করেছে মোহনবাগান। জোসে মোলিনার দল যে এখনও বড় ম্যাচের ধকল সহ্য করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারেনি, সেটা রবিবাসরীয় যুবভারতীতে প্রথম মিনিট থেকে বোঝা গেল। বিশেষ করে প্রথমার্ধে যেভাবে মোহনবাগানের রক্ষণ এবং মাঝমাঠের মধ্যে ফাঁকফোঁকর চোখে পড়ল, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, দলটা একসঙ্গে বেশিদিন অনুশীলন করেনি। তাছাড়া ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামার আগে সেভাবে কঠিন দলের বিরুদ্ধে পরীক্ষিতও হয়নি সবুজ-মেরুন শিবির।
ফিটনেস: মাত্র এক সপ্তাহের অনুশীলন। অনেক ফুটবলার সেটাও পাননি। মোহনবাগান ফুটবলারা যে পুরোপুরি ম্যাচ ফিট নন বোঝা যাচ্ছিল প্রথমার্ধ থেকেই। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে কামিন্স এবং ম্যাকলারেন নামার পর খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা সবুজ-মেরুন করেছিল। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত হল না। আসলে সবুজ-মেরুনের বেশিরভাগ ফুটবলার সঠিকভাবে বল রিসিভটাও করতে পারছিলেন না। সে তুলনায় অনেক সাবলীল মনে হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। আসলে লাল-হলুদ দলটা কিছুদিন হলেও বেশি অনুশীলন করেছে। এই টুর্নামেন্টে নামার আগে অনুশীলন ম্যাচও খেলেছে। চেষ্টাটা ইস্টবেঙ্গলেরই বেশি ছিল।
দুই উইংয়ে ব্যর্থতা: ডুরান্ডে এ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলছিলেন লিস্টন কোলাসো। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নিস্প্রভ দেখালো লিস্টনকে। বলা ভালো ডবল কভারিংয়ে মোহনবাগানের সেরা অস্ত্রকে আটকে দিল ইস্টবেঙ্গল। অপর প্রান্তে মনবীর সিং এবং কিয়ান নাসিরি না থাকায় মোলিনাকে আস্থা রাখতে হয়েছিল তরুণ পাসাং দরজি তামাংয়ের উপর। তরুণ তামাং বড় ম্যাচের চাপ সেভাবে সামলাতে পারলেন না। ফলে মোহনবাগানের দুই উইং-ই এদিন অচল হয়েছিল। যার ফলে প্রভাবহীন মনে হল ম্যাকলারেনের মতো স্ট্রাইকারকেও।
দিয়ামান্তাকসের কামব্যাক: এতক্ষণ মোহনবাগানের দুর্বলতার কথা বলা হল। কিন্তু শুধু মোহনবাগানের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করলে ইস্টবেঙ্গলের পাফরম্যান্সকে খাটো করা হয়। এদিন টিমগেমে প্রায় নিখুঁত পারফরম্যান্সে বাজিমাত করে গেল লাল-হলুদ শিবির। শুরু থেকে আক্রমণ। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা। এবং মোহনবাগানের দুর্বলতাগুলি কাজে লাগানো সবটাই সঠিকভাবে করল লাল-হলুদ শিবির। বিশেষ করে দিয়ামান্তাকোসের প্রশংসা করতেই হয়। গত মরশুমে যিনি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছিলেন, তিনি ডুরান্ডের ডার্বিতে জোড়া গোল করে সমর্থকদের নয়নমণি হয়ে উঠলেন। বিশেষ করে যে ক্ষিপ্রতায় তিনি দ্বিতীয় গোলটি করলেন, সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।
রণকৌশলে মাত ব্রুজোর: অস্কার ব্রুজো ম্যাচের আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আর জোসে মোলিনা বোধ হয় অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। মাঝমাঠে তেমন কোনও ব্লকার নামাননি মোলিনা। আপুইয়া এবং থাপা দুজনেই আক্রমনাত্মক মেজাজের। ফলে বাড়তি চাপে পড়ে গেল মোহনবাগান রক্ষণ। তাছাড়া মোহনবাগানের যে শক্তির জায়গা, সেই উইং-প্লে সেটিকেও ডবল কভারে আটকে দেন ব্রুজো।