সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভালোবাসার বন্ধন ধর্মের অনুশাসন মেনে চলে না। স্নেহ ও ভালোবাসার মূল ধর্মই হল মানবিকতা। আর ৯ আগস্ট রাখিবন্ধনের দিনে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল গোটা দেশ। ১৬ বছরের মুসলিম কিশোরী আনামতা আহমেদ। রাখির দিনে মুম্বই থেকে সোজা পৌঁছে গেলেন গুজরাটের বালসাডের তিঠাল বিচ রোডে। সেখানে গিয়ে রাখি পরালেন হিন্দু কিশোর শিবম মিস্ত্রিকে। শিবমের হাতে তিনটি গিঁট বেঁধে যে রাখি আনামতা পরিয়ে দিয়েছেন, তার আড়ালে রয়েছে অশ্রুসিক্ত এক ঘটনা।
মাত্র ৯ বছর বয়সে শিবমের নিজের বোন রিয়ার মৃত্যু হয় ব্রেন ডেথে। আর রিয়ার দান করা অঙ্গই প্রতিস্থাপন করে আনামতা ফিরে পায় নিজের এক হাত। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৪ এর সেপ্টেম্বরে। এই ঘটনার প্রায় তিন বছর আগে আনামতা নিজের ডান হাতখানি হারিয়েছিল। জানা যাচ্ছে, আলিগড়ে নিজেদের বাড়িতে ছাদে খেলার সময় ১১ কিলো ভোল্টের তারে হাত লেগে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আর তার জেরেই আনামতাকে হারাতে হয়েছিল একটি হাত।
কিন্তু ২০২৪-এ যখন বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়েসি অঙ্গদাতা হিসেবে শিবমের বোন রিয়ার হাতখানা প্রতিস্থাপন করা হয়, তখন সেটাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়েসে কাঁধ থেকে হাত পর্যন্ত অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া। এই ঘটনায় শিবম ও আনামতাদের দুই পরিবারের মধ্যে ভাই-বোনের নতুন সম্পর্কের জন্ম হয়। এবছর আনামতা সুদূর মুম্বাই থেকে গুজরাটে এসেছে শিবমকে রাখি পরাতে। তার সঙ্গে রয়েছে বাবা আকিল ও মা দারাশা। শিবমের কথায় পরের বছর সে যাবে মুম্বাইতে দিদি আনামতার বাড়িতে রাখি পরতে।
শিবমের কথায়, তার বোন রিয়াই যেন এসে তার হাতে রাখি পরিয়ে দিয়েছে। এমনকী আনামতাকেও বলতে শোনা যায়, রিয়াকে আমি কোনওদিন চোখে দেখিনি। শিবমের বাবা-মা এসে যখন আমার হাত ধরলেন তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে আনামতা বলে, আমি আগে কখনও কাউকে রাখি পরাইনি। কিন্তু রাখি উৎসবে যোগ দেওয়ার পর জেনেছি এর আলাদাই মাহাত্ম্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, যে শিবমের বোন রিয়ার মৃত্যুর পর তার কিডনি, লিভার ফুসফুস-সহ আরও বেশ কিছু অঙ্গদান করেন শিবমের পরিবার। এতে নতুন করে বাঁচার উৎসাহ ফিরে পায় ৮টি নতুন জীবন। এবারের এই রাখি বন্ধনের আয়োজন করলেন সুরাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরাই আনামতার পরিবারকে নিয়ে আসেন গুজরাটে। আনামতাকে ছুঁয়েই যেন বেঁচে রয়েছে শিবমের বোন রিয়া মিস্ত্রি।