বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের নয়া দিগন্ত খুলছে সিকিমে। তাও পুজোর আগে। এখন শুধু নাথু-লা নয়। ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তের যুদ্ধক্ষেত্র ডোকলাম এবং চো লা পাস ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে ওই দুটি যুদ্ধক্ষেত্র। জোরকদমে চলছে পরিকাঠামো তৈরির কাজ।
ডোকলাম চুম্বি উপত্যকার একটি এলাকা। সিকিম রাজ্যের অধীন উঁচু মালভূমি এবং উপত্যকা। এর উত্তরে রয়েছে চিনের ইয়াদং কাউন্টি, পূবে ভুটানের হা জেলা। চো লা পাস সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্বতমালার উঁচু পাসগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি এভারেস্টের একটি বেস ক্যাম্প। ওই এলাকা বছরের সব সময় বরফ এবং হিমবাহ আবৃত থাকে। চিন ডোকলাম মালভূমিতে একটি রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করলে ২০১৭ সালের জুন মাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই এলাকার যেখানে ভারত ও চিনা সেনা মুখোমুখি হয়েছিল সেখান থেকে শিলিগুড়ি করিডর অর্থাৎ চিকেনস নেকের দূরত্ব একশো কিলোমিটারের কম। ভারত এবং চিনা সেনাবাহিনী ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। শেষপর্যন্ত অচলাবস্থা কাটে। স্বভাবতই ঐতিহাসিক দিক থেকে ডোকলাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে ১৯৬৭ সালের ১ অক্টোবর চো লা পাসে ভারত ও চিনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সিকিম পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সি শুভকর রাও সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানুয়ারি মাসে যুদ্ধক্ষেত্র পর্যটনের কথা ঘোষণা করেন। দেশে প্রায় ৩০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়। তার মধ্যে তিনটি জায়গা সিকিমে রয়েছে। সেগুলো হলো নাথু-লা পাস, ডোকলাম এবং চো লা পাস। নাথু-লা পাস বহু বছর ধরেই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সমাদৃত। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জায়গাগুলি খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে দুই উঁচু পাহাড়ি এলাকায় পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানুয়ারিতে ভারত ‘রণভূমি দর্শন’ অ্যাপ চালু করেছেন। সেটা দেখেও পর্যটকরা সহজে ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে পারবে।
সিকিম পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের কর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে রাজ্য সরকার চো লা পাসের জন্য ২৫টি এবং ডোকলামের জন্য ২৫টি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেবে। এছাড়াও ১৫টি মোটরবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে। তবে সবটাই হবে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে। কারণ, নতুন পর্যটনকেন্দ্র দুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং চিকেনস নেকের খুব কাছে। যদিও সিকিম পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের কর্তাদের বিশ্বাস উঁচু গিরিপথ, সেখানকার সামরিক ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে অল্পদিনের মধ্যে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে ডোকলাম এবং চো লা পাস জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।